কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি

আফরিন আফসার মাহী

শীত আগমনী বার্তা এখনো এসে পৌঁছেনি প্রকৃতিতে। মেঘমুক্ত আকাশের কারণে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়ের অপরূপ অপরূপ দৃশ্য অবলোকন সুযোগ মিলেছে বৃহস্পতিবার। সূর্য আর মেঘের খেলায় শীতপ্রবণ এ জেলার তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। চোখের কাছে ভেসে থাকা হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ মায়াবী দৃশ্য যে কারোরই মন কেড়ে নেবে।

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবারের মতো এবারও খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা মিলেছে। তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছবির মতো ভেসে ওঠা শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও দেখা যাচ্ছে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল। দেশের সীমানা পেরিয়ে যাদের এই পর্বত দেখার সুযোগ হয় না, তারা এ দৃশ্য উপভোগ করতে তেঁতুলিয়ায় ছুটে আসছেন।

হিমালয়কন্যা হিসেবে পরিচিত দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখতে ভ্রমণ পিপাসুদের ভীড় শুরু হয়েছে । শুধু ইতিহাস আর ঐতিহ্যেই নয়, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জনপদের নাম পঞ্চগড়। আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় এবং বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়ায় পরিষ্কার দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক রূপ।

প্রথম সকালে একটু কালছে দেখায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যকিরণের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। তারপর ক্রমান্বয়ে আবার ঝাপসা হয়ে হারিয়ে যায়। তবে শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ যখন তীর্যকভাবে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ে পড়ে তখন অনিন্দ্যসুন্দর হয়ে আবারো ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন (স্থলবন্দর) থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের ৬৪ কিলোমিটার, চীনের ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের ৫৮ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ির ৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার ১১ কিলোমিটার। কিন্তু মেঘ-কুয়াশামুক্ত আকাশের উত্তর-পশ্চিমে তাকালেই দেখা মেলে বরফ আচ্ছাদিত সাদা পাহাড়, মনে হয় এইতো চোখের সামনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা।

কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফিট। যদিও ১৮৫২ সালের আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর সবোর্চ্চ শৃঙ্গ বলে মনে করা হতো। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে মাসে ব্রিটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন এবং জর্জ ব্যান্ড সর্বপ্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণ করেন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে জানতে পেরে ভ্রমণ পিপাসিরা কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখার খবরে সিত্রাং এর আঘাতের মর্মবেদনা ভুলর দলে দলে ভীড় করছেন পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়ায়।

প্রকৃতি প্রেমিকদের জন্য কান্বচনজংগা পর্বত দেখতে পাওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন কানাডায় গবেষণারত আবহাওয়াবিদ, গবেষক মোস্তাফা কামাল পলাশ। তিনি বলেন, আসছে শনিবার থেকে সোমবার একটি ভালো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে মেঘ মুক্ত আকাশের। আপনি যদি এক দিনের জন্য যেতে চান তবে সেই দিনটি অবশ্য রবিবার হয়। অর্থাৎ রবিবার সকালে সবচেয়ে ভালো দেখার যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘

শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যন্ত আকাশে মেঘ থাকার পরিমাণ নিম্নরূপ:

শনিবার ১০% থেকে ২০% মেঘ থাকার সম্ভাবনা আছে। রবিবার ১০০% মেঘমুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবারে আবারও ১০ থেকে ২০% মেঘ থাকার সম্ভাবনা আছে।