সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর সরকারি প্রচেষ্ঠা বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে-সুজন

    চট্টগ্রাম মেইল : সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করার সরকারি প্রচেষ্ঠাকে বাস্তবায়ন করতে সবাইকে একযোগে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন।

    তিনি গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় দেশের প্রাচীনতম দ্বিনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মাদ্রাসায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত মত প্রকাশ করেন।

    এ সময় সুজন আরো বলেন, সরকার মাতৃভাষা বাংলাকে সর্বস্তরে চালু করার জন্য খুবই আন্তরিক। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই একুশে ফেব্রুয়ারি লাভ করে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। ঐদিন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশন বসে।

    ইউনেস্কোর সেই সভায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। ফলে পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর কাছে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পায়।

    কিন্তু এতো কিছুর পরও কিছু মানুষের হীনমন্যতার কারণে মাতৃভাষা বাংলাকে সর্বস্তরে চালু করার সরকারি প্রচেষ্ঠা পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। ব্যাক্তিগতজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং সাংস্কৃতিক জীবনেও বাংলাভাষাকে অবজ্ঞা করার একটা কালচার সর্বত্র গড়ে উঠেছে।

    তিনি বলেন, অহেতুক বিবাহের নিমন্ত্রণ পত্র কিংবা বিভিন্ন আমন্ত্রন পত্রে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজীকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে বর্তমান সরকার আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছে। এ সুযোগ গ্রহন করে তারা পশ্চাৎপদ শিক্ষা থেকে বের হয়ে অগ্রবর্তী শিক্ষা গ্রহনের যে সুযোগ অর্জন করেছে তাকে কাজে লাগানোর জন্য সুজন সকল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।

    পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মাহবুবুল আলম ছিদ্দিকীর উদ্বোধনী বক্তব্যে ও প্রভাষক মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং প্রভাষক মুহাম্মদ কাসেম এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল।

    বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব শাহাবুদ্দিন আহমদ, হাফেজ মাওলানা হারুনুর রশীদ, মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রমূখ।

    আলোচনা সভা শেষে মিলাদ ও মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা আনোয়ার হোসাইন এবং মাওলানা মুনিরুল মন্নান আল মাদানী।

    মূখ্য আলোচক নাজিম উদ্দিন শ্যামল বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সত্যিই সৌভাগ্যবান কারণ তারা মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি আরেকটি ভাষায় জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। আরবি ভাষার যে নির্যাস রয়েছে ঠিক তেমনি মাতৃভাষা বাংলারও যে নির্যাস রয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করার কাজ করতে পারে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।

    জ্ঞানের দুই ভান্ডারের যোগসূত্র হিসেবেও কাজ করতে পারে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। তিনি আরো বলেন, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল বাঙালির ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার ঘটনা। ‘বাংলা ভাষা প্রাণের ভাষা’ স্লোগানে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয় বাঙালি তরুণ প্রজন্ম।

    ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষার প্রশ্নে একুশের আন্দোলন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ। একুশে তাই বাঙালির চেতনার প্রতীক। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় একেকটি নাম।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…