দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে রোল মডেল হওয়ার পথে বাংলাদেশ- প্রধানমন্ত্রী

    ছবি এনটিভি থেকে সংগৃহিত

    জাতীয় মেইল : ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোলমডেল হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ, দুর্যোগের পূর্বাভাস, উদ্ধার, আশ্রয়ণ ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ আজ এগিয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিশ্বে স্বীকৃতিও মিলেছে।’

    বৃহস্পতিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এশিয়া ও প্রশান্ত মাহসাগরীয় রিজিওনাল কনসালটিভ গ্রুপের চতুর্থ সেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে হয়তো পারব না, কিন্তু আমাদের দূরদর্শী কাজের মাধ্যমে দুর্যোগে যে ক্ষতিসাধন হয়, সেই ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করতে আমরা পারি। বাংলাদেশে আমরা ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস ও ঝুঁকি প্রশমনের প্রতিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছি।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকবেলায়ও সরকার কাজ করছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থাগুলোকে আধুনিক করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগতভাবে স্বাবলম্বী হতে বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জামও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

    তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব না। তবে ক্ষতি হ্রাস করা যায়। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকা দরকার।’

    মানবিক কাজে প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১১ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিক সহায়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

    শেখ হাসিনা তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বৃহদাকার মানবিক সংকটের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। তাই আমাদের এ অঞ্চলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অসামরিক-সামরিক সমন্বয়ের প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্যোগে সাড়াদানের ক্ষেত্রে অসামরিক এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমে, বিশেষ করে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে, মৃতদেহ ও জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বা সড়ক, সেতু মেরামত করতে কাজ করে যাচ্ছেন।’

    ‘আমাদের সার্বিক জাতীয় কৌশলের অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, বাংলাদেশ স্কাউটস, বিএনসিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে ২০১৭ সালে এই গ্রুপের সভাপতি মনোনয়ন করায় আমি রিজিওনাল কনসালটেটিভ গ্রুপের সব সদস্য দেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

    প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ‘রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১’-এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা জাতীয় স্থিতিস্থাপকতার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য আমাদের জাতীয় কাঠামো অসামরিক-সামরিক সমন্বয়বান্ধব। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২-এর আওতায় একটি একীভূত সমন্বয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

    শেখ হাসিনা আরো বলেন, প্রায় ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক-সামরিক সমন্বয়ে পরিচালিত কার্যক্রম, মানবিক সহায়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

    এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিগত কয়েক বছরে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২৩৬ কোটি টাকার সরঞ্জাম ক্রয় করে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন ও অন্যান্য সংস্থাকে হস্তান্তর করেছে বলেও উল্লেখ করেন।

    সম্মেলনে মোট ২৬টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া অংশ নিয়েছে ২৪টি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার ১২০ জন প্রতিনিধি। উদ্বোধনী ও কারিগরি মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ১৮টি সেশন।

    বিএম/রাজীব…