না ফেরার দেশে বর্ষীয়ান রাজনীতিক নুরুল আলম : নওফেল ও মেয়রের শোক

    চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রদূত ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম চৌধুরী আর নেই। রবিবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে দুই ছেলে এক কণ্যা ও স্ত্রীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে পারি দিয়েছে না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহে….রাজিউন)।

    বর্ষীয়ান রাজনীতিক নুরুল আলমের স্বজনরা জানিয়েছে মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৭৩ বছর। তিনি রবিবার ভোরে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

    দুইবারের নির্বাচিত সফল সংসদ সদস্য ও সাবেক এ রাষ্ট্রদূতের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। আজ ভোরে নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি বলেন, সোমবার সকাল ১০টায় জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে প্রয়াতের প্রথম নামাজে জানাজা, বাদ জোহর ফটিকছড়ি কলেজ মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা এবং বাদ আসর ফটিকছড়ির গোপালঘাটা মতিউর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে নিজ গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় সম্মাননার মাধ্যমে তাকে দাফন করা হবে।

    মরহুম আলহাজ্ব নুরুল আলম চৌধুরী ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নের গোপালঘাটা গ্রামের মরহুম মতিউর রহমান চৌধুরীর ছেলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে তিনি ষাটের দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান এ আওয়ামীলীগ নেতা ফটিকছড়ি থেকে ১৯৭৩ সালে তিনি সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং দেশ ও জাতির জন্য সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।

    বর্ষীয়ান রাজনীতিক নুরুল আলম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ১৯৭৩ সালে প্রথম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। এজন্য তাকে কারাগারে যেতে হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০১০ সালে ওমানের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিসহ আরো বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে ছিলেন।

    চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তারা পৃথক বিবৃতিতে বলেন, নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠককে হারিয়েছে। আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি রাজপথে সরব থেকেছেন। মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা।

    প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে পৃথকভাবে শোক জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। মৃত্যুর খবর শুনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ছুটে যান তাঁর বাসায়। এসময় তিনি তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানান।
    শোক বার্তায় তিনি বলেন, নুরুল আলম চৌধুরীর রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি ছিলেন সফল। তার মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম।

    এছাড়াও বরেণ্য এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুর খবর শুনে তাকে শেষ দেখা দেখতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে তার বাসায় ছুটে গেছেন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান সবাই।

    বিএম/রাজীব…