বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাঁধা নেই,-তথ্যমন্ত্রী

    চট্টগ্রাম মেইল : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনলাইনের প্রয়োজন আছে। দেশের অনেক অনলাইন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সংবাদ পরিবেশন করছে। তবে কিছু অনলাইনের এ দায়বদ্ধতা নেই। সম্প্রচার নীতিমালা পাস হলে অনলাইনগুলো নিবন্ধন করা হবে। ইতিমধ্যে অনেক অনলাইনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

    রবিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

    অনলাইন মিডিয়া পৃথিবীর বাস্তবতা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন,আমি প্রতি ২-১ ঘণ্টা পর পর অনলাইনে ঢুকি। নতুন প্রজন্মের অনেকে পত্রিকা পড়ে না। আমি অনলাইনে আডডেট জানার পরও সকালে পত্রিকা পড়ি। এটি অভ্যাস।

    সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মানুষ গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একটি শিশু যে কার্টুন দেখে সেটিও গণমাধ্যম। সত্য সংবাদ যদি হয় কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে, হোক সেটা কোন রাষ্ট্রের বড় কর্তার বিরুদ্ধে, সত্য সংবাদ অবশ্যই প্রকাশিত হবে।

    তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পন। সেজন্য অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশিত হবে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, সমাজ, রাষ্ট্র, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। তাছাড়া টেলিভিশনে যদি বীভৎস দৃশ্য দেখানো হয়, সেই বীভৎস দৃশ্য বাস্তবতা। কিন্তু সেটির কারণে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, সমালোচনা- এসব যদি সমাজ, রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে একযোগে করি তাহলে দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ উপকৃত হবে।

    তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি কখনো ভাবিনি প্রধানমন্ত্রী আমাকে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেবেন। ছাত্ররাজনীতি থেকেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে দলের প্রচার সম্পাদক, মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে দলের মাইকটি ধরিয়ে দিয়েছেন। এবার তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের মাইকটিও ধরিয়ে দিয়েছেন। অর্থ্যাৎ আমার যে মাইকিং দিয়ে শুরু সে মাইকিং এখনো চলছে।

    তিনি বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেছি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রেস রিলিজ লিখে বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে দিয়ে এসেছি পুরনো সাংবাদিকদের সাথে এ ভুমিকায় পরিচিতিও আছে আমার।

    তিনি বলেন, গত ৬ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। এই সময় থেকে আমার প্রাত্যাহিক উঠাবসা, ঘর-সংসার সাংবাদিকদের সঙ্গে। একেবারে প্রতিদিনই সাংবাদিকদের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো সে কারণে আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। এটি সরকার এবং সরকারি দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

    দায়িত্ব নেয়ার পর শুরু থেকেই সাংবাদিক সমাজের দাবি-দাওয়া, অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের কাজ আমি প্রথম দিন থেকেই শুরু করেছি। জাতীয় প্রেসক্লাবের বক্তব্য অনুযায়ী কোন তথ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর নিজে থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রেসক্লাবে যাননি। আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রেসক্লাব সভাপতি, সম্পাদককে বলে সেখানে গিয়েছি।

    ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাথে বসেছি। রিপোটার্স ইউনিটির সাথে বসেছি। সচিবালয় রিপোটার্স ফোরামের সাথে বসেছি। আজকে আমার সৌভাগ্য হল, আমার নিজের শহর, নিজের বাড়ির সাংবাদিক ভাই-বোনদের মিলনমেলায় আসতে পেরেছি।

    নির্বাচনের পর নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করা হবে। মূলত পত্রিকারর জন্য ওয়েজ বোর্ড ছিল। টেলিভিশনের পাশাপাশি দেশে অনেক এফএম রেডিও আছে। দুই-একটির শ্রোতার সংখ্যা অনেক টেলিভিশনের দর্শকের চেয়ে বেশি। তাদেরও সম্প্রচার নীতিমালার আওতায় আনা হবে।

    তথ্যমন্ত্রী বলেন, নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের জন্য আগের মন্ত্রীসভা কমিটি ছিল ৫ সদস্য বিশিষ্ট। এবার দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রীসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

    সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিল বাড়ানো হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে এ তহবিল থেকে সাংবাদিকদের অসুস্থতার পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনা, পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার খরচ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিক নেতাদের পরামর্শও নেয়া হবে।

    অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বেও ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুর কাদের, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল,সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।

    বিএম/রাজীব…