ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরতের সম্পদের হিসাব দেওয়ার নির্দেশ মন্ত্রীর

    চট্টগ্রাম মেইল : ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ। তিনি বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমি মৌখিক সিদ্ধান্ত দিলাম। ঢাকায় গিয়ে মন্ত্রণালয়ে বসে বাকিটা আমি চুড়ান্ত করব।

    আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

    এর আগে অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর বক্তব্যের শেষে এ ধরনের উদ্দ্যেগ গ্রহণ করে মন্ত্রীর টপ ফাইভে থাকার অঙ্গিকারে টপ ওয়ানে থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সিভয়েস২৪ অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক এম নাসিরুল হক।

    মন্ত্রীর উদ্দ্যেশে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম নাসিরুল হক তার পরামর্শে বলেন, আপনি চাইছেন টপ ফাইভে থাকতে তবে আপনি আরেকটু সচেতন হলে টপ ওয়ানে চলে আসতে পারবেন। আপনার অধীনে প্রায় ২ লক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারি আছেন। এ দুই লক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারির মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ থেকে পিয়ন পর্যন্ত সকলের ন্যাশনাল আইডি আছে। সে পরিচয় পত্র অনুযায়ী আগামী ২১ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে সকলের ব্যাক্তিগত সম্পত্তির হিসাব নেবেন। আগামী বছরের জানুয়ারির দিকে গিয়ে পুনরায় আরেকটি হিসাব নেন। তাতেই বুঝতে পারবেন কার কত সম্পত্তি রয়েছে। জানতে পারবেন গড়ে কোন সদস্যটির হিসাব বেড়েছে বা কমেছে। সাথে সাথে তাদের ফ্যামিলির সদস্যদেরও হিসেব নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

    এ পরামর্শের জন্য সাংবাদিক নাসিরের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী মতবিনিময় সভায় বসেই মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেন, আমার মন্ত্রণালয়ে টপ টু বটন যারাই আছেন তাদের সকলের সম্পদের হিসাব আগামী আমারে শেষ সপ্তাহের ২৭-২৮ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে। ঢাকায় গিয়ে চুড়ান্ত হবে।

    এর আগে মতবিনিময়ের শুরুতে মন্ত্রী সারাদেশে ভূমি অফিসে অনেক সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে হাত দিতে যাচ্ছি। দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবো। সিসিটিভির আওতায় আনা হবে উপজেলা, ইউনিয়নের সব ভূমি অফিস। বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে ভয়েস রেকর্ডিংয়ের সুযোগ।

    মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। চট্টগ্রামের তিন মন্ত্রী ও এক উপমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে মিলেমিশেই সারাদেশের পাশাপাশি জনপদের উন্নয়নে কাজ করবো। জনগণকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারাটাই আমার তৃপ্তি। জনগণের মধ্যে যে কেউ প্রশ্ন করলে জবাব দিতে বাধ্য থাকবেন বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

    তিনি বলেন, চট্টগ্রামেই হচ্ছে উপমহাদেশের প্রথম টানেল। এছাড়া বে টার্মিনাল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সব বড় প্রকল্পের ভূমি ছাড়ে প্রায়োরিটি দেওয়া হচ্ছে। শিঘ্রই উচ্ছেদ হবে কর্ণফুলীর দুই পাড়ের সব অবৈধ স্থাপনা।

    তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ে জটিলতা, হয়রানি কাটাতে অটোমেশনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সুফল পেয়েছে জনগণ, পাচ্ছেন এখনো। এর পুরস্কার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পূর্ণমন্ত্রী করেছেন। আমি তার এবং সরকারের মান ও সম্মান ধরে রাখার প্রচেষ্ঠায় সততা, দক্ষতা, স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে কাজ করবো। দুর্নীতি যেদিন স্পর্শ করবে সেদিন হবে আমার শেষ দিন। সচিবের উদ্দ্যেশে মন্ত্রী বলেন আমি আর আপনি মিলে এ মন্ত্রণালয় যদি পরিবর্তন করতে না পারি তবে আর কেউ তা পরিবর্তণ করতে পারবেনা।

    দেশের শীর্ষ অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজ চট্টগ্রাম বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক তপন চক্রবর্তী মন্ত্রীর উদ্দ্যেশে বলেন, শপথ নেওয়ার পর সংবর্ধণা না নেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন আপনার অতি উৎসাহিত নেতা কর্মীদের কারণে তা হয়তো রক্ষা হয়নি। বিমান বন্দরের মতো সংরক্ষিত এলাকায় আপনার নেতা কর্মীরা যেভাবে বিচরণ করেছে তা অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু হয়েছে। তিনি মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, অতি উৎসাহি নেতাকর্মীদের বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন?

    উত্তরে মন্ত্রী বলেন, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই আমি বলেছি কোন সংবর্ধনা না নেওয়ার কথা জানিয়েছি। কিন্তু নিষেধ করার পরও আমি বিমান বন্দরে পৌছালে আমার আসনের লোকজন খুব সহজেই নদী পেরিয়ে বিমান বন্দরে পৌছে যায়। কাউকে সড়ক পথে যেতে হয়নি।

    মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ প্রথমবার পূর্ণ মন্ত্রী পেয়ে তারা সবাই আবেগ আপ্লুত হয়ে হাজার হাজার লোক নদী পেরিয়ে আমাকে সংবর্ধনা দিতে যায়। আমার শত বাধা স্বর্ত্তেও তারা শোনেনি। আগামীতে অতি উৎসাহিরা আর থাকবেনা। তারা পেয়ে পেয়ে এতই পেয়েছে যে তাদেরও আর আগ্রহ থাকবেনা। তাছাড়া পুর্বের মতো বর্তমানেও বিভিন্ন ভূমি অফিসে সারপ্রাইজ ভিজিট অব্যাহত থাকবে বললেন মন্ত্রী।

    চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌসসহ প্রেস ক্লাব ও ইউনিয়নের সাংবাদিকরা।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…