চট্টগ্রামে খাল খনন করতে গিয়ে ফুটো গ্যাস লাইন : খাবার সংকটে ২য় দিন নগরবাসীর

    মোরশেদ রনী : চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে গ্যাস না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। খাল খোঁড়ার সময় ফুটো হওয়া গ্যাস পাইপ মেরামতের কাজ শেষ না হওয়ায় নগরবাসীর ভোগান্তির শিকার হন দ্বিতীয় দিনেও।

    সকাল থেকে গ্যাস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন নগরীর হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো। তবে অনেক হোটেলে খাবারও শেষ হয়ে গেছে। গতকাল রাতে কোনোরকমে খাবার পাওয়া গেলেও আজ মহানগরীর অধিকাংশ হোটেলেও ছিলনা পর্যাপ্ত খাবার। সেখানেও দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।

    কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ কর্তৃপক্ষ (কেজিডিসিএল) জানায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে নগরীর হালিশহর আকমল আলী রোড (মাইট্টেল্ল্যা খাল) এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের খাল খননের কাজ করতে গিয়ে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের রিং মেইল লাইন ফেটে গ্যাসের পাইপ লাইন নষ্ট হয়। এতে এলাকায় প্রচন্ড বেগে গ্যাস নির্গত হয়।

    ফলে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এদিকে মেরামত কাজের জন্য রবিবার ভোর থেকে পুনরায় নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, বন্দর, ইপিজেড পতেঙ্গা এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানালেও খবর নিয়ে জানা গেছে উল্লেখিত এলাকা ছাড়াও নগরীর অধিকাংশ এলাকায় সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকায় সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

    খোজ নিয়ে জানা যায়, রবিবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাইপলাইনে ক্রুটির কারণে নগরীর হালিশহর, পতেঙ্গা, বন্দর, আগ্রাবাদ পুরো এলাকা, সদরঘাট, ফিরিঙ্গী বাজার, পাথরঘাটা, আন্দরকিল্লা, হেম সেন লেইন, জামাল খান, চেরাগী পাহাড়সহ বিভিন্ন অংশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিলো গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে। শনিবার রাত সোয়া ১২ টার পর কোন কোন এলাকায় গ্যাস লাইন চালু হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ীত্ব ছিলো না। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে বাসিন্দারা।

    অনেকে রান্না করতে না পেরে হোটেলে হোটেলে ছুটেছেন গত দুদিন। তবে গ্যাস না থাকায় অধিকাংশ খাবার হোটেলগুলোতে হয়নি রান্না। ফলে সর্বত্রই ছিলো খাদ্য সংকট।

    গ্যাস সংকটে পড়ে চরম ভোগান্তির কথা জানিয়েছে পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দ নিবেদিতা চৌধুরী। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গ্যাস না থাকায় বাসায় কোন খাবার রান্না করা সম্ভব হয়নি। দোকান থেকে নাস্তা কিনে খেয়েছে পরিবারের সদস্যরা। রবিবার সকালেও একই অবস্থা। ফলে বাচ্ছাগুলো না খেয়ে স্কুলে চলে গেছে। হোটেলে গিয়েও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না।

    কৃষাণ দে নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, গ্যাস না থাকায় এমনিতে সমস্যায় আছি। ভিন্ন পন্থায় সকালে নাস্তা তৈরী করা হলেও ভারী খাবার বানানো যাচ্ছে না। এর পর গ্রাহকদের চাহিদাও বেড়ে গেছে। কিন্তু ভাত তরকারী না থাকায় আমরা বিক্রি করতে পারছি না।

    কেজিডিসিএলের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানিয়েছে, পাইপ লাইনটি মাটির প্রায় ১২ ফুট নিচে। এখন ক্ষতিগ্রস্থ পাইপ বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। কর্ণফুলি গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং) কর্মকর্তা সরওয়ার হোসেন বলেন, মেরামত কাজ শেষ করতে সময় লাগতে পারে। তবে রবিবার রাতের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

    উল্লেখ্য : শুক্রবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের খালপাড় এলাকায় মাইট্টাল্লা খাল খননের সময় পাইলিংয়ের একটি হুক গ্যাস সরবরাহ লাইনে ঢুকে ফুটো হয়ে যায়।

    শনিবার বিকালে পাইপে ফুটো হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এর পর থেকে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন অংশে গ্যাস সরবরাহের প্রধান এই ‘রিং লাইনটি’ থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। হঠাৎ গ্যাস চলে যাওয়ায় রান্নায় বিপাকে পড়েন এলাকাবাসীর। দ্বিতীয় দিনেও গ্যাস লাইনের ক্রুটি সারাতে না পারায় ভোগান্তি চরম আকারে রুপ নেয়।

    বিএম/রণী/রাজীব সেন….