বোয়ালিয়া ইসলামিয়া বড় মাদ্রাসার পরিচালক হলেন শাইখুল ইসলাম

    আনোয়ারা প্রতিনিধি : দীর্ঘ আলোচনার পর এলাকাবাসীর সর্বসম্মতিক্রমে বোয়ালিয়া ইসলামিয়া বড় মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম, হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া ও বেফাকুল মাদারিছ আল আরবিয়ার চেয়ারম্যান শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দাঃবাঃ)’র।

    গত ৩ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসার অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ মুহতামিম নিয়োগের ব্যাপারে এলাকাবাসী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর তত্ববধানে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

    দায়িত্ব দেওয়ার সময় আজীবন এই মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে বলে ঘোষণা দেন। উক্ত বৈঠকে তিনি নিজেই এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে নায়েবে মুহতামিমের দায়িত্ব থেকে মৌলানা মফিজুর রহমানকে অব্যাহতি প্রদান করেন। এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নায়েবে মুহিতামিমের পদ শূণ্য থাকবে বলে জানান।

    মাদ্রাসার লেখাপড়া ও দৃশ্যমান উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া মাদ্রাসাটির পরিচালকের দায়িত্ব হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া ও বেফাকুল মাদারিছ আল আরবিয়ার চেয়ারম্যান শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দাঃবাঃ)’র হাতে ন্যস্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্য খুশির আমেজ বইতেছে। এবং  তাঁহার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও মোবরকবাদ জানান।

    উল্লেখ্য : আল্লামা তুরাব উদ্দিন ছাহেব (রহঃ) দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে কুরআন, হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রের উপর পান্ডিত্য অর্জন করে আধ্যাত্মিকতার ছবক নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রসার শিক্ষকতা করেন এবং তৎকালীন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাগণের পরামর্শক্রমে তাহার নিজ গ্রাম বোয়ালিয়ায় ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বোয়ালিয়া ইসলামিয়া বড় মাদ্রাসা। 

    এটি বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা গুলোর মধ্য দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান নামে বেশ পরিচিতি লাভ করে।  শুরুতেই যশখ্যাতি নিয়েই এই মাদ্রাসার পদচারণা শুরু হয় এবং উনার জীবদ্দশায় ১৯৫১ সালে এই মাদ্রাসার দায়িত্ব অর্পণ করেন তাঁহার ছাত্র আল্লামা আবুল খায়ের (রহঃ) এর কাছে।

    তিনিও দীর্ঘদিন এই মাদ্রাসার দায়িত্ব বেশ সুনাম ও দক্ষতার সহিত পরিচালনা করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে অত্র মাদ্রাসার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সৌদি আরবে মাদ্রাসার তহবিল  উত্তোলনে গমন করেন। এবং সেখানেই সড়ক দূর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে সেখানেই দাফন করা হয়।

    এমতাবস্থায় মাদ্রাসার মুহতামিমের পদ শূণ্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে শূরা কমিটি ও এলাকার মুরুব্বীগণের আলোচনার ফলশ্রুতিতে আল্লামা আবুল খায়ের (রহঃ)’র বড় সন্তান মৌলানা মোহাম্মদ ছালেহ’র কাছে মাদ্রাসার সমস্ত দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। তিনিও অত্যন্ত সুচারুরূপে এবং দক্ষতার সহিত মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরবর্তীতে মৌলানা মোহাম্মদ ছালেহ’র জন্মস্থান উত্তর পড়ুয়া পাড়ায়,  মাদ্রাসা আরবিয়া খাইরিয়া নামের একটি ইসলামীক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এবং উক্ত মাদ্রাসার কার্যক্রম  দ্রুততার সহিত দেশ বিদেশে প্রশংসিত হতে থাকে। এর মধ্য এলাকার মানুষ বলতে থাকে মৌলানা মোহাম্মদ ছালেহ- বোয়ালিয়া মাদ্রাসার উন্নয়নের আগ্রহ কমিয়ে তাহার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা আরবিয়া খাইরিয়ার উন্নয়নে জোড়ালো ভূমিকা রাখতেছেন।

    এরই পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় বিশৃঙ্খলতা বিরাজ করলে তিনি বোয়ালিয়া ইসলামিয়া মাদ্রসার দায়িত্ব ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

    মৌলানা মোহাম্মদ ছালেহ’র তত্ত্বাবধানে পরিচালনার সময়ে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম, সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ছিল তুঙ্গে। ১৯৯৮ সালে শূরা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে উক্ত মাদ্রাসার প্রবীণ শিক্ষক মৌলানা বদরুদ্দীন ছাহেব (রহঃ) কে মুহতামিম এবং মৌলানা মফিজুর রহমান কে নায়েবে মুহতামিম হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মৌলানা বদরুদ্দীন ছাহেব মুহতামিম হিসেবে দায়িত্বরত থাকলেও কার্যত মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতেন মৌলানা মফিজুর রহমান।

    মৌলানা মফিজুর রহমান দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে নায়েবে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও মাদ্রাসার শিক্ষা ক্ষেত্রে  ও  মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ঐতিহ্যগত ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হন বলে এলাকাবাসী জানান। 

    মৌলানা বদরুদ্দীন ছাহেব (রহঃ) দায়িত্বরত অবস্থায় মারা যাওয়ার প্রায় ১০ মাস মুহতামিম  নিয়োগ না হওয়ায় মাদ্রাসার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই সময় নায়েবে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মৌলানা মফিজুর রহমান। 

    বিএম/ফয়সাল/রাজীব…