কাশ্মিরে ফের গোলাগুলি ২ পাক সেনাসহ নিহত ৮

    বিএম ডেস্ক : কাশ্মিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে, দু-দেশের সীমান্ত পোস্ট থেকে সীমান্ত প্রহরীরা গোলাগুলি শুরু করলে ৬ জন বেসামরিক ও ২ পাকিস্তানি সৈন্যের প্রাণ যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং, ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর), শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে জানায় যে, কাশ্মিরের (এলওসি) নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে ভারতীয় পোস্ট থেকে ছোঁড়া গুলিতে দুই পাক সৈন্য শহীদ হয়েছেন।

    নিহত ২ পাকিস্তানি সৈন্য

    বিতর্কিত কাশ্মিরে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সৈন্যরা একে অপরের পোস্ট ও গ্রামকে লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে যাতে কমপক্ষে ৬ বেসামরিক নাগরিক ও দুই পাক সৈন্য নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। শনিবার ভোর রাতের বেলায় আবারও লড়াই শুরু হয়, ভারত-শাসিত কাশ্মীরে দুই ভাইবোন ও তাদের মা মারা যায়।

    দুই পারমাণবিক সশস্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কাশ্মীরের হিমালয় অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলইসি)কাছে পুঁচ অঞ্চলে পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি চালানোর পরে এই তিনজন মারা যায় বলে ‘আল-জাজিরা’র কাছে পুলিশ নিশ্চিত করে। শিশুটির বাবা গুরুতরভাবে আহত হন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

    পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নসরুল্লাহ খান জানান, কাশ্মীরের নাকিয়ালে ভারতীয় বোমাবর্ষণে একজন মানুষ ও একটি ছেলে নিহত হয়। খান বলেন, তত্ত পানি এলাকায়ও একজন আহত হয়েছে।

    পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছিল, বেসামরিক জনসংখ্যার ওপর ভারতীয় পোস্ট থেকে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে দু-পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। এদিকে পৃথকভাবে, রাওয়ালকোটের একজন পুলিশ কর্মকর্তা, ‘আল জাজিরা’কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন এবং তিনটি ঘরে রাতের বেলায় ভারতীয় গোলাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে যায়।

    পাকিস্তানের শাসিত কাশ্মীরে সরকারি কর্মকর্তা উমর আজম বলেন, ভারী অস্ত্র নিয়ে ভারতীয় সৈন্যরা এলওসি বরাবর সীমান্ত গ্রামবাসীদের নিরঙ্কুশভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

    উভয় দেশের কর্মকর্তারা সামরিক সংঘর্ষের জন্য রুটিন বিবরণ ব্যবহার করে বলেছিলেন যে, তাদের সৈন্যরা ‘যথাযথভাবে’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং কাশ্মীর সীমান্তের বিভিন্ন সেক্টরে ২০০৩-যুদ্ধবিরোধী চুক্তির ‘অযৌক্তিক’ লঙ্ঘনের জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করেছে। দুটি দেশই সেনা ঘাঁটির সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানায়।

    পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ) এবং পাকিস্তান নৌবাহিনী ‘সতর্কতা অবলম্বন ও সজাগ’ রয়েছে, আইএসপিআর জানিয়েছে। ভারতীয় বিমান হামলার পরে দক্ষিণ এশিয়ায় এক মারাত্মক উত্তেজনা শুরু হয়, পাক সেনাদের হাতে ভারতীয় পাইলট আটক হলে দেশ দুটোর মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার অবস্থা হয়। পাক সরকার ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দিলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা শীতলতা আসে যা আজকের হামলায় ফের চাঙ্গা হয়।

    ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশের পরপরই উত্তেজনা বেড়েছে। ভারত জৈশ-ই-মুহম্মদ (জেএম) শিবিরে হামলা চালাতে ভারতীয় বিমান এলওসি লঙ্ঘন করে যে জৈশ জঙ্গিরা ভারত-শাসিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী বোমা হামলা করেছে বলে দাবি করেছিল। ১৪ ই ফেব্রুয়ারির সেই হামলায় ভারতের প্রায় অর্ধশত সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিল।

    কাশ্মীরে বিদ্রোহী দলগুলি ১৯৮৯ সাল থেকেই ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং কাশ্মীরকে পাকিস্তান শাসনের অধীনে অথবা স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতির দাবি জানায়। ভারত-বিরোধী মনোভাব এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছে এবং অধিকাংশ লোক ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন করে এবং ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভেও অংশগ্রহণ করে।

    বিএম/রনী/রাজীব