জিয়া জাদুঘরের নাম পরিবর্তনে ৫০ হাজার গণস্বাক্ষর : প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে স্বারক লিপি

    চট্টগ্রাম মেইল : আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে চট্টগ্রামের জিয়া জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে রুপান্তর করতে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার লোকের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছাত্র ফোরামের‘ নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশনায় সংগৃহিত গণস্বাক্ষরের কপি সংযুক্ত করে দ্রুত নাম পরিবর্তণের বাস্তবায়ন চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বরাবরে স্বারকলিপি প্রদান করে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

    গতকাল ১০ মার্চ রবিবার সকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে.এম.খালিদ (এমপি) বরাবর গণস্বাক্ষরসহ এ স্বারক লিপি প্রদান করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রীর পক্ষে তার ব্যাক্তিগত সহকারী কর্মকর্তা মো. হাবীবুর রহমান স্বারকলিপি গ্রহণ করেন। এছাড়া আজ ১১ মার্চ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তেঁজগাও কার্যালয়ের দপ্তরেও ৫০ হাজার গণস্বাক্ষরসহ স্বারকলিপিটি জমা দেন সংগঠনের নের্তৃবৃন্দরা।

    পৃথক দুটি দপ্তরে স্বারকলিপি প্রদানকালে সংগঠনের সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক কার্যকরী সদস্য আব্দুর রহিম শামীম, সংগঠনের সহ-সভাপতি সৈকত বর্মণ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ সহ-সম্পাদক রাহুল দাশ, সংগঠনের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এস.এম আলামিন বাবু, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল হক সুমন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন মানিক, যুবনেতা মোস্তাফা কামাল, রেজাউল করিম মামুনসহ অন্যান্য নের্তৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

    স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরামের নেতা-কর্মীবৃন্দ চট্টগ্রামের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে সুধী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

    দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে বাঙ্গালি জাতি বাঙ্গালি জাতি যুদ্ধাপরাধীদের হত্যার রায় কার্যকর করেছে। তৎমধ্যে চট্টগ্রামের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী ফাঁসির কাস্টে ঝুলেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ইনডামেইন্টারি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদেরকে দেশে পুনবার্সণ করেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়েছিল।

    জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে ৩ শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিহত হন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়।

    যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

    এই সার্কিট হাউসে ১৯৭১ সালে পাক-হানাদার বাহিনী হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে এনে বিভিন্নভাবে নির্যাতন নিপীড়ণ চালিয়েছে। উপরন্ত চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য কোন স্থাপনা এখানে নেই।

    স্বারকলিপিতে নেতাকর্মীরা দাবী করেছে যেহেতু জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসণ ও পুরস্কৃত করেছে সেহেতু তার নামে কোন যাদুঘর থাকার প্রয়োজন নেই।

    এদিকে চট্টলবীর মরহুম আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে’ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রথম প্রস্তাব এনেছেন।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে এ প্রস্তাবের পক্ষে নীতিগতভাবে সমর্থন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্য।

    পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে জোর জনমত সৃষ্টি করতে মাঠে নামে চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছাত্র ফোরামের‘ নেতা-কর্মীরা। ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর” এ রুপান্তর করার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরাম। বেশ কয়েকদফা মানববন্ধন ও মিছিল সবাবেশও করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

    গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরীর এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে অমর একুশে বই মেলার গেইটের সম্মুখে সংগঠনের সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক কার্যকরী সদস্য আব্দুর রহিম শামীম এর সভাপতিত্বে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পংকজ কুমার দস্তিদার। আরো : ৫০ হাজার স্বাক্ষরে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে “মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি জাদুঘর” রুপান্তর হবে গণদাবী !

    তখন তিনি বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্থানি সেনারা এই সার্কিট হাউজকে তাদের ক্যাম্প বানিয়ে ফেলে। সেটি ছিল পাকিস্থানি সামরিক জান্তার দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে কত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী সাধারণ বাঙালিদের ধরে সেই ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছিল, তার কোনো হিসেব নেই। কিন্তু জিয়াউর রহমান এইখানে তেমন কোন স্মৃতি নেই। তার নামে করা এই জাদুঘর চট্টগ্রামের মানুষ প্রত্যাখান করেছেন। এইখানে এখন আর দর্শনার্থী আসেন না। তাই এই জাদুঘর কে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর রুপান্তর করা হলে সর্বস্থরের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সুযোগ হবে এবং বিপুল দর্শনার্থী সমাগম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমেও জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামের সাথে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়ার নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির নামে সেই যাদুঘরের নাম পরিবর্তন ও প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করেছি মন্ত্রিপরিষদের সভায়। এটি অচিরেই বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, এভাবে পালাক্রমে সকল অপশক্তির নাম চট্টগ্রাম থেকে আমরা উৎপাটিত করবো। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ নাম গুলো এবং স্থাপনাগুলো আমরা সংরক্ষন করবো। আরো : চট্টেশ্বরী সড়কের নাম নিয়ে দ্বিমত নেই, পরিবর্তনের পরিকল্পনাও নেই-নওফেল

    একই দিন বেলা ১২টার সময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে জিয়া জাদুঘরকে দ্রুত “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে” রুপান্তরের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে কাজির দেউড়ি মোড়ে সংগঠনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক কার্যকরী সদস্য আব্দুর রহিম শামীম এর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাহুল দাশ এর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আরো : জিয়া জাদুঘরকে দ্রুত “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে” রুপান্তরের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

    তাছাড়া গত ১ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর” এ রুপান্তর করার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির সাথে সংহিত প্রকাশ করে স্বাক্ষরও করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আরো : স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে জিয়ার পরিবর্তে”মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর” নামকরণ! নওফেল

    স্বাক্ষর শেষে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, স্বাক্ষর করার জন্য সাধারণ মানুষের ব্যাপক উৎসাহ প্রমাণ করে জিয়া জাদুঘরকে “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর” এ রুপান্তরের দাবি এখন চট্টগ্রামের মানুষের গণ দাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে এই নামকরণ বাস্তবায়নের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

    বিএম/ রাজীব সেন প্রিন্স…..