কাতারে সড়ক দূর্ঘটনা : ২০ দিন পর রাউজানে সিরাজের লাশ

    রাউজানে সিরাজের দাফন সম্পন্ন

    চট্টগ্রাম মেইল : দীর্ঘ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে ২০ দিন পর দেশে পৌছেছে কাতারে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত রাউজানের সিরাজুল ইসলামের মরদেহ। আজ ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোররাত ৩টার সময় কাতার থেকে মরহুম সিরাজুল ইসলামের লাশ তার নিজ পৈতৃকভুমি রাউজানের গ্রামের বাড়ীতে এসে পৌছায়।

    একই ঘটনায় নিহত ফটিকছড়ির জাহেদের লাশ গত এক সপ্তাহ আগে নিজ বাড়িতে এসে পৌছালেও সিরাজের পাসপোর্ট জটিলতাই লাশ আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাতারের বাংলাদেশ মিশনের এক কর্মকর্তা।

    এদিকে ভোরে সিরাজুলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্বজনরা। বাড়ির একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে বৃদ্ধ মা ছকিনা খাতুন বার বার জ্ঞান হারায়। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে সিরাজের দুই ভাই ও এক বোন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও ১ মেয়ের আর্তনাদে শোকে স্তব্দ হয়ে পড়ে পুড়ো এলাকাবাসী। আহাজারীতে ভারী হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস।

    স্বজনরা জানিয়েছে কাতারে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ২০ দিন পর আমিন মুন্সির বাড়ীর মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের কনিষ্ট ছেলে সিরাজুল ইসলামের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আসে মঙ্গলবার ভোরে।

    এরপর সকাল ১০টায় স্থানীয় উত্তরসর্তা গাউছিয়া হাফেজিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ময়দানে নামাজে জানাযা অনুষ্টিত হয়। জানাযায় বিপুল পরিমান মানুষ অংশগ্রহন করেন।

    মরহুমের নামাজে জানাযার ইমামতি করেন ফটিকছড়ি সৈয়দ বাড়ী দরবারের সাজ্জাদানশীন পীরে ত্বরিকত আলহাজ্জ আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলাহ (মা.জি.আ)। পরে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

    এলাকাবাসীরা শোক প্রকাশ করে বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত সিরাজের রেখে যাওয়া স্ত্রী, ১২ বছর বয়সি কন্যা ও সাড়ে ৭ বছর বয়সি ২ ছেলের। কাতার সরকার কতটুক সাহায্য দেবে তাও এখনো স্পস্ট নয়।

    এদিকে নিহত সিরাজকে উদ্দ্যেশ্য করে তার প্রবাসী ভাগিনার হৃদয় বিদারক ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পড়েও নির্বাক স্বজনরা। তার ভাগিনা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় মামাকে দেখতে গেলাম মগলিনা, সাথে বন্ধু মো হাছানও ছিল। সেখানে প্রবাসী এক মুরুব্বির দোকানে এক প্রকার জোর করেই ডুকালাম নাস্তা করাতে। সিরাজ মামার সাথে তখন ধর্মপুরের জাহেদ আংকেলটাও ছিল।

    অনেক জোর জবরদস্থি করে নাস্তা করালাম। নাস্তা করতে করতে জাফত নগরের আশরাফ ভাইয়ের মৃত্যুর খবর টা নিয়েও আফসোস করলাম। কে জানতো, মামাকে নিয়ে এর পরের দিন সবাই আফসোস করবে?

    এরপরে মামা বলেছিলো ভাগিনা, কোন পরিচিত গ্যারেজের খবর থাকলে বলিস, আমি বলছি মামা গ্যারেজ তো পরিচিত নাই তবে খবর নিয়ে দেখবো, এরপরে বিদায়। কে জানতো সেটাই হবে আমার মামা সিরাজের শেষ বিদায়?

    দেখা করার ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার আগেই মামা পাড়ি জমালেন উপারে…. ভাবতেই কলিজা কেঁপে উঠতেছে যে দুইটা মানুষের সাথে ১ দিন আগে একই সাথে একই টেবিলে গল্প করতে করতে নাস্তা করলাম তারা দুজনই একই সাথে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।

    এর আগে রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়াডের উত্তরসর্তা আমিন মুন্সির বাড়ীর সিরাজুল ইসলাম গত ২৭মার্চ কাতার পাড়ি জমান। মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে গত ৩ এপ্রিল কাতারে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রান হারান। এ ঘটনায় ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের জাহেদ নামে আরো এক যুবক নিহত হয়।

    গুরুতর আহত হয়ে সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে ফটিকছড়ি দক্ষিণ ধর্মপুর হাজী মোশারফ আলী বাড়ীর মুহাম্মদ জমির। তবে বর্তমানে তার অবস্থা শংকামুক্ত বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তাছাড়াও একই ঘটনায় আহত হয়েছেন উত্তরসর্তা লস্কর উজির বাড়ীর সৈয়দ হোসেন মিয়াও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

    বিএম/রাজীব সেন…