খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : রামগড় সাব্রুম সীমান্তবর্তী ফেনী নদীতে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সনাতন ধর্মাবলম্বিদের বারুণী স্নানোৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে দু’দেশের লক্ষ মানুষের মিলনমেলা এ ফেনী নদীতে।
সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর শিথিলতার দরুণ সারাদিন এপার-ওপারে ঘুরাঘুরি করেন দু’দেশের মানুষ। পারাপারের এ সুযোগ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসেন হাজারো নারীপুরুষ। অবাধ পারাপারের সুযোগে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারে এমন আশঙ্কায় সেদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ সর্বোচ্চ সর্তকতা জারী করেছে সীমান্তে।
ফলে গত বছরের মত এবারও বারুণী মেলা উপলক্ষে সীমান্ত পারপারের কোন সুযোগ দেবে না বিজিবি-বিএসএফ। সীমান্তের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৃটিশ আমল থেকেই চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশি তিথিতে প্রতিবছর ফেনী নদীতে বারুণী স্নানে মিলিত হন দুই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ। তারা পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পন করে এখানে। নদীর দুই তীরে দুই দেশের পৌরহিতরা সকালেই বসেন পূজা অর্চণার জন্য।
পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা ছাড়াও নিজের পুণ্যলাভ ও সকল প্রকার পাপ, পংকিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে ফেনী নদীর বারুণী স্নানে ছুটে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বী আবাল বৃদ্ধ বণিতা। স্নানোৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এখন তা সার্বজনিন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
দুই দেশে অবস্থানকারী আত্মীয়- স্বজনদের দেখা সাক্ষাৎ করার জন্যও অনেকে দূর দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন। ঐতিহ্যবাহী এ বারুণী মেলা উপলক্ষে দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই দিনে দু’দেশের সীমান্ত অঘোষিতভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকার সুবাদে এপার বাংলার মানুষ ছুটে যায় ওপারের সাবরুম মহকুমা শহরে, আবার ওপারের লোক এসে ঘুরে যান রামগড়। কিন্তু গত বছর পারাপারের এ সুযোগ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে ওপরে অনুপ্রবেশ করতে পারে এমন আশঙ্কায় তারা গত বছরও সীমান্ত পারাপার কঠোরভাবে প্রতিহত করে। ফলে রামগড় ও ওপারের সাব্রুমে মেলায় যোগ দিতে আসা লক্ষাধিক মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।
সাব্রুম থেকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গতবারের মত এবারও বিএসএফ কোন অবস্থায়ই সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ দেয়নি কাউকে। সাব্রুম সীমান্তে সর্বোচ্চ সর্তকতা জারী করেছে বিএএসএফ।
এর আগে বিএসএফ ছাড়াও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সাব্রুমে বিএসএফ, পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসনের যৌথ সভায়ও বারুণী স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে সীমান্ত পারাপার কঠোর ভাবে রুখতে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিজিবির রামগড়স্থ ৪৩ ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষও বারুণী মেলা উপলক্ষে সীমান্ত পারাপার বন্ধে কঠোর ভুমিকা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত অতিক্রমরোধ এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবার বাংলাদেশী ও ভারতের পুর্ণ্যাথীদের স্নান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার জন্য ফেনী নদীতে দুটি পৃথক স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এবার অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয় সীমান্তে।
রামগড় কেন্দ্রিয় কালী বাড়ির প্রধান পুরোহিত মৃদুল চক্রবর্তী জানান, এবছর মঙ্গলবার(২এপ্রিল) সকাল ৯টা হতে বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত বারুণী স্নান করা যাবে।
বিএম/আলমগীর/রাজীব…