সাবেক মন্ত্রী ও সচিবদের সরকারি বাসা ছাড়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

    বিএম ডেস্ক : মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য ও সচিবদের অবস্থান করা সরকারি বাসা বর্তমান মন্ত্রীদেরকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রিসভায় নতুন করে যুক্ত হওয়া সদস্যদের মধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্তদের সরকারি বাসা বুঝিয়ে দিতেও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

    মঙ্গলবার পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করেন। রিটে জাতীয় সংসদের স্পিকার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ও সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

    এর আগে গতকাল সোমবার ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে হুমায়ুন কবির পল্লবসহ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী সংশ্লিষ্টদের প্রতি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল।

    নোটিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাইকোর্টে এ বিষয়ে আইনি প্রতিকার চেয়ে রিট করা হয়েছে।

    পল্লব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্যদের দখলে সরকারি বাসা-এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ওই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে দ্রুত সরকারি বাসা বুঝিয়ে দিতে প্রথমে নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। তবে এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ রিট আবেদন করেছি।’

    মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া বাসায় উঠতে না পারায় জনগণের এবং রাষ্ট্রীয় কাজের ক্ষতি হচ্ছে বলেও জানান এ আইনজীবী।

    মন্ত্রিপরিষদের বর্তমান সদস্য ৪৬ জন হলেও তাদের বসবাসের জন্য সরকারি বাসা রয়েছে মাত্র ২৩টি। বাকিদের সরকারি আবাসন নেই। ২৩ জন মন্ত্রী সরকারি বাসা বরাদ্দ পেলেও এখনো উঠতে পারেননি ১২ জন। আবাসন পরিদপ্তর থেকে সাবেক মন্ত্রীদের বাসা ছাড়ার জন্য একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও তারা বাসা ছাড়েননি। কয়েকজন নতুন মন্ত্রী বাসা বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজেও যোগাযোগ করেছেন। এরপরও তারা বাসা খালি করেননি।

    আবেদন করে বাসা না পাওয়া ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।

    জানা গেছে, মন্ত্রিত্ব শেষ হওয়ার তিন মাস পার হলেও এখনও সরকারি বাসায় বাস করছেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান (৫ নম্বর মিন্টো রোড), সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (ছায়াবীথি-৬, ‘নিলয়’, হেয়ার রোড), সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো. মজিবুল হক (২০ পার্ক রোড), সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ (৩৫ নম্বর মিন্টো রোড), সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল (৫ নম্বর মিন্টো রোড), সাবেক মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট ১ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলা পশ্চিমাংশ) এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ছায়াবীথি-২ ‘তন্ময়’, হেয়ার রোড)।

    এছাড়া গত ৩ জানুয়ারি সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা গেলেও তার পরিবারের সদস্যরা এখনও ২১ বেইলি রোডের বাসায় বসবাস করছেন। মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট ১ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় (পশ্চিমাংশ) বাস করছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলোতে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু বাংলো খালি না হওয়ায় অ্যাপার্টমেন্টগুলোও খালি করেননি তারা।

    উল্লেখ্য, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য বর্তমানে ১৬টি বাংলো ও ১৭টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এছাড়া নতুন ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। এতে মন্ত্রীদের বসবাসের জন্য মোট বাসা হবে ৩৩টি। তবে নতুন ১০টি অ্যাপার্টমেন্টের কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভার পরিধি আরও বাড়তে পারে। কারণ, সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সদস্য ছিলেন ৫২ জন। আর বর্তমান মন্ত্রিসভায় সদস্য রয়েছেন ৪৬ জন। ফলে নতুন ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হলেও আরও প্রায় ২০টি বাসা সংকট থাকবে।

    বিএম/রনী/রাজীব