আদালতে প্রভাব খাটিয়ে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়েছে: রিজভী

    আদালতকে ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা বানোয়াট ও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছে সরকার বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

    তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চেয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রেখে বিএনপিকে নিঃশেষ করতে, ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু সরকারের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

    শুক্রবার (৩১ মে) সকালে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

    রিজভী বলেন, বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে, গ্রেফতার করে, নির্যাতন করে, গুম করে, খুন করেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের দমানো যায়নি। বিএনপিকে ভাঙার সরকারের কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে সরকার গঠন করেও তাদের স্বস্তি নেই। দেশ-বিদেশে বির্তর্কিত সেই নির্বাচন বৈধতা পায়নি। তাই বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে সরকার বিএনপি নেতা-কর্মিদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর অপচেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।

    তিনি বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে কিছু কিছু গণমাধ্যম সরকারের ইন্ধনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এমনকি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়েও নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে। দলের নেতৃত্ব নিয়েও নানা রকম সংবাদ প্রকাশ করছে।

    বিএনপির এ নেতা বলেন, কারাবন্দি থাকলেও সারাদেশব্যাপী বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি অনুভব করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন তিনি, বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, খোঁজখবর রাখছেন, সাংগঠনিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

    রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে। আমি বলতে চাই- বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে না, বরং সরকার বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি অসুস্থ ছিলেন, আপনাকেও বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও চুয়াত্তর বছর বয়স্ক একজন নারী, তিনি গুরুতর অসুস্থ, বিশেষায়িত হাসপাতালে আমরা তার সুচিকিৎসা দাবি করেছি। আপনারা এতটা অমানবিক যে তার চিকিৎসা নিয়েও কটাক্ষ করছেন, এমনকি আইনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে জামিনেও বাধা দিচ্ছেন।

    তিনি বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিশ্বাস করে সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বেগম খালেদা জিয়া। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত এমনকি ছাত্র, শিক্ষক, সাধারণ মানুষ সবাই বিশ্বাস করে আদালতকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে বেগম জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে এবং তিনি যাতে জামিন না পেতে পারেন সেজন্য সরকারই পদে পদে বাধার সৃষ্টি করছে। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই বেগম জিয়াকে বন্দি করে রেখেছেন। সুতরাং দেশনেত্রীকে বন্দি করে রাখা এবং বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই সূত্রে গাঁথা। বেগম জিয়ার বন্দীত্ব মানেই গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রাখা। তবে কোনো ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত আছে। আমি সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-ঈদের আগেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

    এর আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারো নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও ঈদের আগেই নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শ্লোগানে দেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

    মিছিলে অংশ নেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টিএস আইয়ুব, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন সোহান, সহ-সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম মিঠু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইফতে খায়রুজ্জামান শিমুল, ছাত্রদল নেতা জিসান, সুমন হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী।

    বিএম/রনী/রাজীব