উইন্ডিজকে সহজেই হারালো বাংলাদেশ

    উইন্ডিজকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে শুভসূচনা করেছে বাংলাদেশ। ডাবলিনে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে হেসেখেলেই জয় পায় টাইগাররা। ২৬২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে এদিন আলো ছড়িয়েছে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসানের ব্যাট।

    ডাবলিনের ক্লনটার্ফ ক্রিকেট মাঠে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয়রা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে জড়ো করে ২৬১ রান, উইকেট বিচারে যা বাংলাদেশের জন্য ছিল সহজ লক্ষ্যই।

    দলের পক্ষে এদিনও শতক হাঁকান ওপেনার শাই হোপ। চোটের কারণে আগের ম্যাচের দুর্দান্ত পারফর্মার জন ক্যাম্পবেল মাঠে না নামায় হোপের সাথে ওপেনিংয়ে নামেন সুনীল আমব্রিস। তিনি ৩৮ রান করে মেহেদী হাসানের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ইনিংসের ১৭তম ওভারে (দলীয় ৮৯ রান) মিরাজের বলে আমব্রিসকে তালুবন্দী করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

    আমব্রিসের বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফেরেন ডোয়াইন ব্রাভোও। মাত্র ১ রান করে সাকিব আল হাসানের শিকার হয়ে তিনি সাজঘরে ফেরেন, উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে। তবে তার বিদায়ের পর ওপেনার হোপকে নিয়ে দলের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন রস্টন চেজ।

    তৃতীয় উইকেটে ১১৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন হোপ ও চেজ। ৪০তম ওভারে চেজকে (৬২ বলে ৫১ রান) আউট করে জুটি ভাঙেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। নিজের পরের ওভারে মাশরাফি সাজঘরে ফেরান সেঞ্চুরিয়ান হোপ (১৩২ বলে ১০৯ রান) ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে (২ বলে ৪ রান)।

    মাশরাফির এই দুর্দান্ত বোলিংয়েই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। সেই প্রত্যাবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভিষিক্ত শ্যান ডওরিচকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং জনাথান কার্টারকে মুস্তাফিজুর রহমান সাজঘরে ফেরান।

    শেষদিকে কেমার রোচ ও অ্যাশলে নার্সও ফেরেন সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজের শিকার হয়ে। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারানো দলটির সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬১ রান।

    বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি তিনটি, সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজ দুটি এবং সাকিব ও মিরাজ একটি করে উইকেট শিকার করেন। যদিও শেষদিকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন, তবে বল হাতে এদিন বেশ খরুচে ছিলেন ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত মুস্তাফিজ।

    জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। একপ্রান্তে তামিম ধীর-স্থির ভঙ্গিতে খেলে গেলেও অন্যপ্রান্তে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন সৌম্য সরকার।

    উদ্বোধনী জুটিতে দুজনে যোগ করেন ১৪৪ রান, যা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি (আগের রেকর্ড ছিল ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হান্নান সরকার ও মানজারুল ইসলাম রানার ১০৫ রান)। ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধ-শতক হাঁকানো সৌম্য ৯টি চার ও ১টি ছক্কার সহায়তায় ৬৮ বলে ৭৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নিলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।

    তবে এতে দলের বিপদ ঘটতে দেননি তামিম ও সাকিব। দুজনই বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন। শতকের খুব কাছে গিয়ে অবশ্য তামিমকে ফিরতে হয়েছে আক্ষেপ নিয়ে। ক্যারিয়ারের ৪৫তম অর্ধ-শতকের ইনিংসটি থামে ৮০ রানে, ১১৬ বলের যে ‘সাবধানী’ ইনিংসে ছিল ৭টি চার। দ্বিতীয় উইকেটে সাকিবের সাথে তিনি গড়েছিলেন ৫২ রানের জুটি।

    তামিমের বিদায়ের পর অবশ্য দলকে আর কোনো উইকেটের পতন দেখতে হয়নি। কনকনে ঠাণ্ডায় ক্যারিবীয়দের ‘ঘাম না ঝরলেও’ ব্রেক থ্রুর চেষ্টায় তাদের মরিয়া মনোভাব ছিল ঘাম ঝরানোর মতই। নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের সাথে সাকিবের দুর্দান্ত জুটি দলকে এনে দেয় সহজ জয়, ৩০ বল ও ৮ উইকেট বাকি থাকতেই।

    তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রানের অপরাজিত জুটি গড়া সাকিব ও মুশফিক যথাক্রমে ৬১ (৬১ বলের মোকাবেলায়, ৩টি চার ও ২টি ছক্কায়) ও ৩২ রান (২৫ বলের মোকাবেলায়, ২টি করে চার-ছক্কায়) করে অপরাজিত থাকেন।

    ক্যারিবীয়দের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও রস্টন চেজ।

    সংক্ষিপ্ত স্কোর

    টস: উইন্ডিজ

    উইন্ডিজ ২৬১/৯ (৫০ ওভার)
    হোপ ১০৯, চেজ ৫১, আমব্রিস ৩৮
    মাশরাফি ৪৯/৩, সাইফউদ্দিন ৪৭/২, মুস্তাফিজ ৮৪/২, সাকিব ৩৩/১, মিরাজ ৩৮/১

    বাংলাদেশ ২৬৪/২ (৪৫ ওভার)
    তামিম ৮০, সৌম্য ৭৩, সাকিব ৬১, মুশফিক ৩২
    চেজ ৫১/১, গ্যাব্রিয়েল ৫৮/১

    ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।