এসআই জুলফিকারের মহানুভবতা : ভারসাম্যহীন যুবক ফিরে ফেলো পরিবার

    কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি : সীতাকুণ্ড মডেল থানার এসআই জুলফিকার হোসেনের মহানুভবতায় তিন মাস পর পরিবার ফিরে পেয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মোহাম্মদ মিয়াকে।

    গত প্রায় তিন মাস আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার ফকিরাচাঁন গ্রামের মৃত জুনু মিয়া ও ছেনোয়ারা বেগমের ছেলে মোহাম্মদ মিয়া।

    শুক্রবার রাত তখন আনুমানিক ৩টা। এসআই জুলফিকার হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টহল দিচ্ছিলেন। এসময় পৌরসভার বটতল এলাকা অতিক্রম করার সময় তখন হঠাৎ মহাসড়কের পাশে উলঙ্গ অবস্থায় একজন মানুুষ পড়ে থাকতে দেখে গাড়ি দাঁড় করান।

    জুলফিকার গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পান লোকটি তীব্র যন্ত্রনায় ছটফট করছে। তার পায়ে বেশ ক্ষত। ক্ষতস্থানে পোকা কিলবিল করছে। এমন দৃশ্য দেখে হৃদয় কেপেঁ উঠে। তিনি সঙ্গীয় ফোর্সদের লোকটিকে দেখতে বলে নিজে পার্শ্ববর্তী একটি ঘরে গিয়ে লোকটির জন্য একটি লুঙ্গি ও গেঞ্জি চেয়ে নেন। তারপর শীতে কাঁপতে থাকা লোকটিকে সেসব পরিয়ে দেন।

    লোকটি একটু আরাম বোধ করলেও পায়ে পোকার উপদ্রবে অস্থিরতায় ভুগতে থাকেন তিনি। এবার সঙ্গীয় ফোর্সের অন্য সদস্যদের পরামর্শে একটি পেট্রল পাম্প থেকে কিছু অকটেন কিনে পায়ের ক্ষতস্থানে দিয়ে একে একে পোকাগুলো ফেলতে থাকেন। এক সময় দৃশ্যমান সব পোকা মুক্ত হবার পর লোকটি জুলফিকারের প্রতি আস্তাশীল হয়ে উঠেন। ধীরে ধীরে তার সাথে গল্প জমিয়ে তুলেন জুলফিকার। জানতে চান পরিচয়। লোকটি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ও রোগাক্রান্ত হলেও তার নাম ঠিকানা সঠিকভাবেই জানান।

    ঠিকানা জেনে এসআই জুলফিকার ওই ঠিকানা খুঁজে বের করতে ফটিকছড়ি থানায় যোগাযোগ করে তার স্বজনদের সন্ধান পান। জানতে পারেন মো. মিয়া একজন বিবাহিত মানুষ। সংসারে তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে রয়েছে। কিন্তু তিনি মানসিক রোগাক্রান্ত হওয়ায় তারা তাকে ফেলে চলে যান। কিন্তু তার মা ছেনোয়ারা বেগম ও কিছু আত্মীয়-স্বজন আছেন।

    পরে তাদেরকে খবর দেওয়া হলে মোঃ মিয়ার খালাত ভাই আলমগীর হোসেন মিয়ার মা ছেনোয়ারা বেগমকে নিয়ে থানায় আসেন। জুলফিকার তাদের সঙ্গে অসুস্থ মোঃ মিয়াকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান।

    মো. মিয়ার মা ছেনোয়ারা বেগম জানান, মোঃ মিয়া গত প্রায় তিন মাস আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বর্তমানে একজন পুলিশের মাহমুভতায় আমার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছি। আমি উনার প্রতি কৃতজ্ঞ।

    এব্যাপারে এসআই জুলফিকার বলেন, একজন অসহায় মানুষ রাস্তায় পড়ে আছে দেখে নিজের কাছে খারাপ লাগলো। তাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে তুলে দিতে পেরে নিজেকে গর্ববোধ করছি।

    বিএম/কামরুল/রাজীব