এ যেন বিকল্প বিআরটিএ!

    দীর্ঘ এক যুগ ধরে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর রুট পারমিট, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেনসহ মোটরযানের অন্যান্য প্রয়োজনীয় নকল কাগজপত্র প্রস্তুত করে আসছিল একটি চক্র।

    চক্রটি গাড়ি ও চালকের ধরন বা চাহিদা ভেদে বিভিন্ন অংকের অর্থের বিনিময়ে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসের’ ন্যায় সব ধরনের জাল সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে দিত। আর এর মূল গ্রাহক ছিলেন অদক্ষ ড্রাইভার এবং চোরাই বা ত্রুটিযুক্ত গাড়ির মালিকরা। তারাই স্বল্প খরচে এই চক্রের মাধ্যমে জাল কাগজপত্র সংগ্রহ করতেন।

    বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।

    এর আগে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর পূর্ব কাফরুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগ।

    গ্রেফতাররা হলেন- মো. আ. খালেক (৬৭), মো. আনোয়ারুল হক শিমুল (৪২), মো. আ. জলিল (৬৪), মো. আ. রহিম (৩১) ও মো. মোতালেব হোসেন (৫৮)।

    এ যেন এক বিকল্প বিআরটিএ। একটি গাড়ি রাস্তায় চলাচলের জন্য রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সনদ, রেজিস্ট্রেশন, ইন্সুরেন্স সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ডিজিটাল নম্বর প্লেটসহ যতো কাগজ প্রয়োজন হয়- তার সবই সরবরাহ করতো এই চক্রের লোকজন। আর এজন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার গড়ে তুলেছিলো তারা। আছে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সিল, স্ট্যাম্প সবই। কিন্তু প্রতিটি জিনিসই জাল।

    এছাড়াও এসব কাগজপত্র জাল করতে ব্যবহৃত ১টি ১৭ ইঞ্চি কালার মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১৬০ জিবি হার্ডডিস্ক এবং ১টি প্রিন্টার জব্দ করা হয়।

    ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রতারক চক্রটি দালাল হিসেবে বিভিন্ন সময় আসল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশী গ্রাহকদেরও জাল কাগজপত্র সরবরাহ করে প্রতারণা করত।

    তারা ক্ষেত্র বিশেষে গাড়ি-প্রতি সকল কাগজপত্র প্রস্তুতের জন্য ৫-৬ হাজার টাকা আদায় করত। এ ক্ষেত্রে সরকার বিপুল রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হতো।

    আবদুল বাতেন বলেন, সম্প্রতি জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রস্তুতকারী মোস্তফা কামাল জয় ও তার সহযোগী শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাফরুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

    গ্রেফতারদের মধ্যে আনোয়ারুল হক শিমুল ও আ. জলিল এর আগেও জাল কাগজপত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিল। তারা জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও জাল কাগজপত্র প্রস্তুতের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

    এ ঘটনা কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

    বিএম/রনী/রাজীব