ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে জটিলতা,বিতর্কের সৃষ্টি

    আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ১৫ দফায় আশ্বাস এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করতে পারেনি ছাত্রলীগ।

    অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে উঠে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী একটি খসড়া কমিটি গঠন করলেও তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

    এই কমিটিতে সদ্য বিদায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা প্রায় অর্ধশত নেতাকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি বিকল্প কমিটি জমা দিয়েছেন সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।

    ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেঁধে দেয়া সময় শেষ হয় ২২ এপ্রিল। এরপর ৮ দিন অতিবাহিত হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি তারা।

    এর মধ্যে একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, যা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সমন্বয় করে এই খসড়া প্রণয়নের কথা বলা হলেও তা করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

    বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এই খসড়া কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তাদের বড় একটি অংশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। খসড়া কমিটিতে ২ জন ব্যাংক কর্মকর্তা, অন্তত ২ জন বিবাহিত, অপকর্মের দায়ে বহিষ্কৃত, নির্ধারিত ২৯ বছরের বেশি বয়স, হত্যা মামলার আসামি, একজন প্রাইমারির শিক্ষক (নতুন কমিটি গঠনের পর চাকরি ছেড়েছেন), প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত এমন অনেককে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

    সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভিন্ন সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের অনেকেরই কেন্দ্রীয় কমিটিতে এটি হবে প্রথম পদ। অন্যদিকে গত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল এমন অনেককে কমিটির খসড়াতে রাখা হয়নি।

    এ অবস্থায় কমিটি গঠনের সার্বিক বিষয় নিয়ে রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও তার সাক্ষাৎ পাননি শোভন ও রাব্বানী। মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিকল্প কমিটি নিয়ে দেখা করেন সাবেক সভাপতি সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির।

    সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন, ‘আপার (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’ এর বেশি কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তবে সদ্য সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

    খসড়া কমিটি নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, যে খসড়া কমিটির কথা বলা হচ্ছে সেটি একদম শুরুর দিকের। সেই খসড়ার কিছু নাম পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই তালিকা নানক ভাই (জাহাঙ্গীর কবির নানক) ও রহমান ভাইয়ের (আবদুর রহমান) কাছে দেয়া হয়েছে। তারা নেত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি ঘোষণা করবেন। কবে নাগাদ কমিটি হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কমিটি জমা দিয়েছি। এখন কবে সেটি প্রকাশ হবে বলতে পারছি না। হয়তো সময় লাগবে।

    এর আগে গত বছরের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন হয় ২৯ এপ্রিল। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন হয় যথাক্রমে ২৫ ও ২৬ এপ্রিল। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১ (খ) ও (গ) ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। গঠনতন্ত্রে জেলা ইউনিটগুলোর মেয়াদ রাখা হয়েছে এক বছর। সম্মেলনের পর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার দুই মহানগরের সম্মেলনের পর থেকে প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও এই তিন শাখার কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

    ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ২১ এপ্রিলের মধ্যে কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে প্রতিশ্রুতিও রাখতে পারেননি তারা।

    সেদিন সাক্ষাৎ শেষে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছিলেন, রাজধানীর তিন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে তিন দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে হবে। সেটিও এখনও করা হয়নি।

    এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস জানান, কমিটি গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি হয়ে যাবে।

    বিএম/রনী/রাজীব