ছাত্রলীগের সিভি নেওয়া হচ্ছে

    শিগগির ঘোষিত হবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব!

    ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া ২৯৯ নেতার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে চলছে চিরুনি অভিযান। দলীয় তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

    এ জন্য নতুন করে সিভি নেওয়া হচ্ছে। সিভি ধরে ধরে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে পদ পাওয়া নেতা-নেত্রীর সম্পর্কে। যারা তথ্য গোপন করে পদ-পদবি বাগিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সংগঠনের পদ পেয়েছেন এমন ২০ জন নেতা ও নেত্রীর সঙ্গে কথা বললে তাদের ১৬ জনই সত্যতা স্বীকার করেছেন। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

    এতে অনেক নেতা ও নেত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে। এর মধ্যে শিবিরের সাবেক ক্যাডার, যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবনকারী, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কৃত, একাধিক বিবাহিত, সন্তানের জনক-জননী এমনকি ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কৃতরা পদ পেয়েছেন এবারের ঘোষিত কমিটিতে। এ কমিটি বাতিল করে পুনরায় কমিটি ঘোষণার দাবি করেন পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগেরই একাংশের হামলায় আহত হন নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত ১০/১২ জন। রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশার কপালে ১৮টি সেলাই পড়ে।

    তখন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা এবং দলের কেন্দ্রীয় চার নেতাকে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৭ জনের নামে অভিযোগ আছে বলে গণমাধ্যমকে জানান। পরদিন পদ বঞ্চিত নেতারা ১৭ জনের সঙ্গে আরও ৮২ জনের নামে বিবাহিত, অছাত্র, মাদক সেবন ও বিক্রয়কারী, যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তান বলে অভিযোগ করেন।

    এ নিয়ে পদবঞ্চিতরা রাতে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। মারপিটের বিচার দাবি এবং কমিটি বাতিলের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে চলে অনশন কর্মসূচি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কমিটিতে পদ পাওয়া প্রত্যেক নেতা-নেত্রীর ব্যাপারে খোঁজ নিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দলীয়ভাবেও পুনরায় তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন।

    যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলবে তাদের বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। জানা গেছে, কমিটিতে স্থান পাওয়া ৩০১ জনের মধ্যে ২৯৯ জনের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছাড়া বাকি সবার এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে পদ পাওয়া প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নতুন করে সিভি জমা দিতে বলা হয়েছে।

    এ প্রসঙ্গে সংগঠনের দফতর সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, কমিটিতে পদ পাওয়া সব নেতা-নেত্রীর কাছে নতুন করে সিভি চাওয়া হয়েছে। ঠিকানা অনুযায়ী একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা খোঁজ নিচ্ছেন।

    তিনি জানান, ৫ দিন আগে তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলায় ওই সংস্থার সদস্যরা যান। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সন্তান ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বরকত হোসেন হাওলাদারের ব্যাপারেও তথ্য নিচ্ছেন ওই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সংস্থাটির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আমাকে ফোন করেছিলেন। পরে জানতে পারি, আমার সম্পর্কেও তথ্য নিতে এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।

    বরকত জানান, মঠবাড়িয়া থেকে যারা পদ-পদবি পেয়েছেন তাদেরও বাড়ি গিয়ে তথ্য নিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। নতুন করে সিভি সংগ্রহ প্রসঙ্গে সংগঠনের এ সহ-সভাপতি বলেন, হয়তো ডাটাবেজ তৈরি করার জন্য চাওয়া হতে পারে। আগেও সিভি অনুযায়ী ছাত্রলীগের নেতাদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে।

    সূত্র জানায়, মঠবাড়িয়া থেকে এবার কেন্দ্রে পদ পাওয়া মামুন বিন সাত্তার, আশরাফুল ফাহাদ, শাহিন তালুকদারসহ আরও কয়েকজনের বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খোঁজ নিয়েছেন। ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, সঠিক তথ্য যাচাই করতে নতুন করে সিভি নেওয়া হচ্ছে।

    গ্রামে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হলে কমিটিতে ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছিল, তার সত্যতা মিললে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। ফলে অন্য দল থেকে কেউ ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকতে পারবে না। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

    বিএম/রনী/রাজীব