ফাইনালের পথে এক পা বার্সেলোনার

    উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে লিভারপুলকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। ক্যাম ন্যুতে ৩-০ গোলের জয়ে ফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রাখলো কাতালানরা।

    ক্যাম্প ন্যুতে বুধবার রাতে শুরু থেকে জমে উঠে ম্যাচ। প্রথম মিনিটে আক্রমণে গিয়ে শুরুটা করে বার্সেলোনা। তবে দ্রুতই গতিময় ফুটবল দিয়ে তাদের চাপে ফেলে দেয় লিভারপুল।

    সালাহর গতি ভীতি ছড়ায় বার্সেলোনার রক্ষণে। প্রথমার্ধে সাদিও মানে ও সালাহ প্রচুর বল পেলেও সেভাবে মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগানকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি।

    অন্যদিকে সাবেক ক্লাব লিভারপুলের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরেন ফিলিপে কৌতিনিয়ো। তৃতীয় মিনিটে তার রক্ষণচেরা পাসে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে যান ইভান রাকিটিচ। গোলে শট না নিয়ে ক্রোয়াট মিডফিল্ডার কাট ব্যাক করতে চেয়েছিলেন সুয়ারেসকে। দারুণ ব্লকে সেবার দলকে বাঁচান জোয়েল মাতিপ।

    নিজেদের রক্ষণে লিভারপুলের ডিফেন্ডারদের ট্যাকলগুলো ছিল দুর্দান্ত। ত্রয়োদশ মিনিটে দারুণ এক স্লাইডে মেসিকে হতাশ করেন অ্যান্ডি রবার্টসন। প্রতি-আক্রমণে সুযোগ এসেছিল লিভারপুলের সামনে। তবে সুবিধাজনক জায়গায় থাকা মানেকে খুঁজে নিতে পারেননি সালাহ।

    স্বাগতিকদের অপেক্ষার অবসান হয় ২৬তম মিনিটে। চলতি আসরে নিজের প্রথম গোলে দলকে এগিয়ে নেন সুয়ারেস। জর্দি আলবার দারুণ ক্রসে স্লাইড করে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জাল খুঁজে নেন লিভারপুলের সাবেক এই স্ট্রাইকার।

    ৩২তম মিনিটে কৌটিনহোর শট ব্লক করেন ফাবিনহো। শুরুর গতি প্রথমার্ধের শেষ দিকে কমে একটু। প্রথমার্ধে গোলের জন্য বার্সেলোনার চেয়ে বেশি শট নেয় লিভারপুল। তবে তাদের ছয় শটের একটিও ছিল না লক্ষ্যে।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বার্সেলোনা গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেয় লিভারপুল। ৪৭তম মিনিটে জেমস মিলনারের বুলেটগতির বাঁকানো শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন টের স্টেগান। ৫৩তম মিনিটে কোনোমতে সালাহর শট ঠেকিয়ে আবারও বার্সেলোনার ত্রাতা গতকাল সাতাশে পা দেওয়া এই জার্মান গোলরক্ষক।

    ৫৯তম মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন জেমস মিলনার। গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার।

    আক্রমণের ঝাপটা সামাল দিতে রক্ষণে শক্তি বাড়ান আরনেস্তো ভালভেরদে। কৌটিনহোর জায়গায় নামান নেলসন সেমেদোকে। কাজও হয় তাতে।

    ৬৮তম মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ এসে যায় সুয়ারেসের সামনে। মেসির নিখুঁত ক্রস থেকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেলেও তালগোল পাকিয়ে শট নিতে পারেননি তিনি।

    ৭৫তম মিনিটে ব্যবধান ২-০ করে ফেলেন মেসি। সার্জিও রবের্তোর গায়ে লাগার পর বল পেয়ে যান সুয়ারেস। তার শট ক্রসবারে লেগে ফিরলে এগিয়ে এসে নিয়ন্ত্রণে নেন অরক্ষিত বার্সেলোনা অধিনায়ক। বুক দিয়ে বল নামিয়ে জালে পাঠাতে কোনো সমস্যা হয়নি তার।

    লিভারপুলের বিপক্ষে তৃতীয় দেখায় এই প্রথম গোল পেলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় সব মিলিয়ে ৩২ দলের বিপক্ষে গোল করলেন তিনি। মেসির চেয়ে বেশি ৩৩ দলের বিপক্ষে গোল আছে কেবল রাউলের।

    ৮২তম মিনিটে অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে স্কোর লাইন ৩-০ করেন মেসি। ঝাঁপিয়েও তার নিখুঁত শট ঠেকাতে পারেননি লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন। মেসিকেই ফাবিনিয়ো ফাউল করায় বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পেয়েছিল বার্সেলোনা। চলতি আসরে অধিনায়কের এটি দ্বাদশ গোল।

    দুই মিনিট পরই ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় লিভারপুলের। রবের্তো ফিরমিনোর শট গোললাইন থেকে ঠেকিয়ে দেন রাকিতিচ। ফিরতি বলে সালাহর শট ফিরে পোস্টে লেগে।

    যোগ করা সময়ে ব্যবধান বাড়ানো সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বার্সেলোনা। উসমান দেম্বেলে গোলরক্ষককে একা পেয়েও তার হাতে বল তুলে দেন।

    প্রথম লেগের ফলাফল দেখে ইচ্ছা করলেই বলে দেওয়া যায় বার্সেলোনা ফাইনালে যাবে। কিন্ত এটা ফুটবল, শেষ পর্যন্ত কি হবে জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও এক সপ্তাহ।

    বিএম/রনী/রাজীব