বিবিসির উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান

    বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রতিবাদ করে বক্তারা বলেন, ‘বিবিসির খবর ঠিক নয়। তারা এ তথ্য কোথা থেকে পেয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাদের উস্কনিমূলক বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি।

    বিবিসির মতো দায়িত্বশীল গণমাধ্যমকে এ ধরণের উসকানিমূলক ও সংবেদনশীল বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহবান জানান বক্তারা।

    জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রতিবাদ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহবায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্চালনা করেন, সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটির সভাপতি বিশপ ফিলিপ অধিকারী,জাতীয় চার্চ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেভারেন্ড দীপক দাস, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদদীন মাসউদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আবদুর রশিদ, বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ডা. উত্তম কুমার বড়–য়া, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, জন্মাস্টমী পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ দে, স্বামী সঙ্গীতানন্দসহ ধর্মীয় নেতারা।

    বাইবেল সোসাইটির সভাপতি বিশপ ফিলিপ অধিকারী বলেন, বর্তমান সরকারের শাসনামলে আমরা অনেক শান্তিতে আছি। সবার সঙ্গে মিলে-মিশে আছি। জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে আমরা একত্রে বসবাস করছি। আমরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। একে অপরের সুখ-দুঃখ-বেদনা ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই একই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছি।

    তিনি আারো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেখেন, সমীহ করে কথা বলেন, অন্য কেউ এই ভাবে বলেন না এবং দেখেন না। তিনি বলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে আমাদের দেখা হয় বাংলাদেশে তার চেয়ে অনেক সম্মানের সঙ্গে দেখা হয়।

    দেশের মানুষ সব ধরণের ধর্মীয় ঘৃণা ও সন্ত্রাসী আক্রমন-হামলাকে মোকাবেলা করার জন্য আজ ঐক্যবদ্ধ। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের শেষ ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চেতনাকে ধারণ করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিবিসির মতো দায়িত্বপূর্ণ গণমাধ্যমকে এ ধরণের উসকানিমূলক ও সংবেদনশীল বক্তব্যকে প্রত্যাহার করার আহবান জানান বক্তারা।

    আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এ ধরণের বক্তব্য বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এক অশনি সংকেত উলে­খ করে বক্তারা বলেন, বিশ্ব শান্তির জন্য গণমাধ্যমের ভ‚মিকা আরো বেশি যত্নশীল ও দায়িত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের শেষ আস্থা এমনটি উলে­খ করে তারা বলেন, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কিছু লক্ষ্যচ্যুত মানুষ বা সংগঠনের কারণে সারাদেশ একটি ধর্মান্ধ রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করতে পারে না।

    সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি কেউ যেন বাংলাদেশে আর করতে না পারে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ধারাবাহিকতায় জাতির জনকের আদর্শের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ধরে রাখতে সচেষ্ট। অথচ একটি চিহিƒত অপশক্তি সব সময় এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

    বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সম্প্রীতির ধারাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও উন্নয়নের মূল লক্ষ্য। সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের সব আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় কর্মতৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলা হয়, জঙ্গি তৎপরতা দমনে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ সব সময় সহযোগিতা করবে।

    লিখিত বক্তব্যে সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহবায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হলেও বাঙালি সংস্কৃতি ও চেতনা এর মূল চালিকাশক্তি। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পেছনের চালিকাশক্তি ছিল এই অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য।

    তিনি আরো উলে­খ করেন, ধর্মীয় ঘৃণাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক ঘুটির চাল হিসেবে। বাংলাদেশেও এক শ্রেণির ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী এই স্পর্শকাতর হাতিয়ারকে ব্যবহার করছে। দেশের উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করা এবং বর্তমান সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলকে বন্ধুহীন করতে একটি গভীর চক্রান্ত এর সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের ধারণা।

    উলে­খ্য, বিবিসির একটি টক শোতে (বিবিসি ইমপ্যাক্ট) পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ও দেশের বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় নির্যাতন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বিশেষ করে খ্রিস্টান সম্প্রদায় নিপীড়নের শিকার ও আতঙ্কগ্রস্ত বলে উলে­খ করেন।

    বিএম/তাইফুল/রনী