রোহিঙ্গাদের বর্জ্যে পরিবেশ বিপন্ন : বিলুপ্তির পথে খাল

    ইসলাম মাহমুদ, কক্সবাজার : বালুখালী তেলিপাড়া খালে বাঁধ দিয়ে বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় কৃষকেরা বোরো চাষাবাদ, মৌসুমী শাক-সবজির খামারী করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এ খাল দিয়ে সীমিত আকারে চাষাবাদ করা গেলেও তাও রোহিঙ্গাদের কারণে পুরোটা ঘরে তোলা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ।

    খালের দু’ পাড়ে উজানে সমতলে,পাহাড় ও টিলায় সারি সারি আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বসতি। এসব রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ময়লা-আর্বজনা, মল-মূত্রসহ নানা রকমের বর্জ্য এ খাল দিয়ে ভেসে আসছে। এতে খালের পানি কুচকুচে কালো হয়ে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে চাষাবাদ, সবজি চাষ তো দূরের কথা পরিবেশ বিপন্ন হয়ে টেকা দায় হয়ে পড়ছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।

    একই অবস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা মধূরছড়া-তেলীপাড়া খাল,মাছকারিয়া খাল, মধূরছড়ার হাতির ডেরা ছড়া, বালুখালী খালের। আরো খারাপ অবস্থা থাইংখালী খাল, তেলখোলা- লোন্ডাখালী খাল, পালংখালী খালের উপর অংশ ও সংলগ্ন ক্যাম্প এলাকার আরো বেশ কয়েকটি খাল, ছড়া, আবাদী জমি রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

    উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী এলাকার অন্তত সাত হাজারের মতো পরিবারের প্রায় ২০ হাজারের মতো স্থানীয় লোকজন বহুমুখী সমস্যা ও সংকটে মূখে পতিত।

    উখিয়ার ঘাট তেলি পাড়া এলাকার মোঃ কোরবান আলী, আলী আকবর, মুহাম্মদ হোসাইন ক্ষোভের সূরে বলেন, দুই বছর আগেও তেলিপাড়া খালটি এলাকাবাসীর কাছ আর্শীবাদ ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি স্থানীয় লোকজনের জন্য অভিশাপে রূপান্তরিত হয়ে রোহিঙ্গাদের বিশ্রী বর্জ্যের কারণে এখাল বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এ খালে এখন আর মাছ ধরা যায়না। তবে মাঝে মধ্যে রোহিঙ্গাদের লাশ ভেসে আসে বলে তারা জানান।

    কাস্টমস এলাকার বাদশা মিয়া, শামসুল আলম, বালুখালীর ফরিদ সওদাগর, ইয়াকুব আলী, কবির আহাম্মদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বালুখালীর দক্ষিণ খালে বাঁধ দিয়ে বোরো চাষাবাদ করা হতো। রোহিঙ্গাদের কারণে গত বছর জমিগুলো খিল পড়ে ছিল, চাষাবাদ করা যায়নি। এবছরও খালে বাঁধ দিয়ে ভূ- উপরিভাগের পানি নিয়ে চাষাবাদ, খেত, খামার করা সম্ভব হয়নি। তারা বলেন, নলকূপ স্থাপন করে বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে এবছর কিছু জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়।

    তারা ক্ষুব্ধ কন্ঠে জানান, এত কষ্ট করে, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে চাষ করেও ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। কারণ খাল ও ছড়া বেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কুৎসিত, দূষিত বর্জ্যগুলো স্হানীয়দের দুুুই তিন ফসলী আবাদ জমিতে পড়ে বোরো ধান জ্বলে, পুৃঁড়ে বিবর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

    পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী সহ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বলেন, মানবতাকে সম্মান জানাতে বিপুলসংখ্যক মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় প্রদান করা হয়। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি দিনে দিনে কেমন যেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। স্থানীয় লোকজনের বর্ণিত অভিযোগ ও সমস্যা গুলো পুরোপুরি সমর্থন রয়েছে তার।

    তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার লোকজন গত দুই বছর ধরে গবাদি পশু, হাঁস – মুরগী লালন পালন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। একদিকে গো চারণ ভূমিতে রোহিঙ্গাদের ঘর, খাদ্যের চরম সংকট, রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী চুরি করে জবাই করে খেয়ে ফেলছে। কোথাও গিয়ে প্রতিকার পাচ্ছে না।

    স্থানীয়রা কষ্ট করে চাষ বাস করলেও পুরো ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। ফসলের মাঠে রোহিঙ্গাদের বর্জ্য, ময়লা, আর্বজনা পড়ে ধান সহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে উক্ত চেয়ারম্যান জানান। উখিয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কার্যক্রম না থাকায় রোহিঙ্গা কর্তৃক পরিবেশ বিপর্যয়ের ব্যাপারে দেখা শুনার মত তেমন কেউ নেই।

    উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা দৈনন্দিন ময়লা, আর্বজনা ও বর্জ্যের পাশাপাশি প্রায় আট হাজার একর জুড়ে পাহাড়, টিলা উজাড় করা এবং এসবের মাটি বর্ষার পানিতে ধূয়ে আছড়ে পড়বে সংলগ্ন পাহাড়ী ছড়া, খাল গুলো ও সমতল আবাদী জমিতে। এতে আগামী বর্ষাকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে প্লাবনের সম্মুখীন হতে পারে স্থানীয় লোকজন।

    এসব পাহাড় ও টিলা উজাড় করে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্হা, দেশী- বিদেশী এনজিও গুলো ইচ্ছে মত স্হাপনা নির্মাণ অব্যাহত রাখলেও এক্ষেত্রে স্হানীয় বন কর্মীরা অসহায়ত্ব বোধ করা ছাড়া বিকল্প কিছু করার নেই বলে বন কর্মীরা জানান।

    বিএম/রাজীব সেন..