তরুণ-তরুণীনের আড্ডায় জমজমাট নগরীর রেস্টুরেন্টগুলো

    নগরীতে রেস্টুরেন্টগুলোতে ইফতার এবং সাহরী খেতে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়েছে। নগরীর বেশীরভাগ রেস্টুরেন্টগুলোতে এ সময় প্রচুর লোকসমাগম হয়।

    বিশেষ করে ইফতারের সময় ভিড় হয় বেশী। বর্তমানে নগরীতে প্রায় চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর প্রায় সবগুলোতেই প্রতিদিন ছোট বড় ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হয়।

    এরকমই একটি গ্রুপ মিলিত হয়ে ইফতার করে নগরীর মেহেদীবাগস্থ একটি রুফ টফ রেস্টুরেন্টে।জানাযায়, তারা চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের এইচএসসি ৫৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সবাই এইচএসসি পাশ করেছেন ২০১১ সালে। একসাথে ইফতার করতে রেস্টেুরেন্টে এসেছেন একই ব্যাচের ৪০-৪২ জন বন্ধু।

    তাদের মধ্যে অনেকে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি বা ব্যবসা করছেন। আর কারো পড়াশুনা শেষের দিকে। ইফতারের আগ মুহূর্তে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন সবাই। কেউ কেউ মোবাইলে সেলফি তুলছেন। সবার চোখেমুখে হাসি। ইফতার করতে রেস্টুরেন্টে কেন জানতে চাইলে তাদের মধ্যে সাইফুর রহমান রানা বলেন, আসলে এখন একসাথে জড়ো হওয়ার জন্য রেস্টুরেন্ট হচ্ছে বেস্ট জায়গা। একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি জমিয়ে আড্ডা দেয়া যায়। মন খুলে কথা বলা যায়। গত বছর রমজানে সবাই একত্রিত হয়েছিলাম, আবার এই রমজানে হলাম।

    তাদের আয়োজক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন মাশুক,মালেক,রানা,আরিফ,মামুন ও ফয়সাল। এসময় মজার মজার স্মৃতিচারণে ব্যস্ত ছিলেন শাহনাজ পারভীন জবা, নূসরাত, মুন্না,মাসুদ সহ সবাই। অনেকে আবার দীর্ঘদিন পর সহপাঠিদের পেয়ে সেলফি তোলা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল।

    এরকমই শিক্ষার্থীসহ তরুণ-তরুণীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নগরীর রেস্টুরেন্টগুলো। বিভিন্ন শপিংমলকে কেন্দ্র করেই এসব রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। তবে অধিকাংশ রেস্টুরেন্টের টার্গেট থাকে তরুণ-তরুণী বা শিক্ষার্থী। অনেক সময় রেস্টুরেন্টগুলো শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন অফারও দিয়ে থাকে। ফেসবুকে চেকইন করলেও বিশেষ ছাড় দেয়া হয়।

    নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলায়ও এখন রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠছে। এক সময় রেস্টুরেন্টগুলো শুধুমাত্র তরুণ বা শিক্ষার্থী নির্ভর থাকলেও এখন সব বয়সের মানুষ আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে নগরীতে প্রায় ৪০০টির বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে এসব রেস্টুরেন্টগুলো নানান অফার দিয়ে থাকে।

    নগরীর সফল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী উইন্ড অব চেইঞ্জ এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ রুম্মান আহম্মেদ বলেন, নগরীতে ছোট-বড় মিলে প্রায় চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। দিন দিন রেস্টুরেন্টগুলো শিক্ষার্থী এবং তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে অনেকে হোটেলের পাশে রেন্টুরেন্ট শব্দটি বসিয়ে হোটেলকে রেস্টুরেন্ট বানাতে চায়। কিন্তু হোটেল আর রেস্টুরেন্ট এক না। হোটেল খুলে সেই ভোর পাঁচটায়, সেখানে ব্রেকফাস্ট পাওয়া যায়। আর রেস্টুরেন্ট খোলা হয় দুপুরে।

    তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে খুশির খবর হচ্ছে এখন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুধুমাত্র তরুণদের উপর নির্ভর না। সব বয়সের মানুষ এখন রেস্টুরেন্টে আসতে শুরু করেছে। রেস্টুরেন্টের মান আমাদের ধরে রাখতে হবে। গত একবছরে প্রায় ৫০টির মত রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে মনে করেন রেস্টুরেন্টে যত টাকা বিক্রি হয় সব টাকাই লাভ। একটি রেস্টুরেন্ট চালানো যে কি টাফ, যারা চালায় শুধু তারাই এটা বুঝবে। আর কোন প্রতিষ্ঠানের সামনে রেস্টুরেন্ট শব্দটি বসিয়ে দিলেই রেস্টুরেন্ট হয়ে যায় না। এটার সাথে মানেরও একটা ব্যাপার আছে।

    এ সম্পর্কে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, ট্রিট শব্দটি রেস্টুরেন্টের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, নতুন চাকরি এসবে এখন সবাই ট্রিট চায়। আর ট্রিট মানেই হচ্ছে রেস্টুরেন্ট এনে খাওয়ানো। একটা সময় আমরা প্রয়োজনে রেস্টুরেন্ট যেতাম। এখন রেস্টুরেন্ট যাওয়ার জন্য কোন কারণের প্রয়োজন নেই। যেকোন সময় রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসি।

    তিনি আরো বলেন, রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পাশাপাশি জমিয়ে আড্ডা দেয়া যায়। এখন বসে আড্ডা দেয়ার জন্য ভালো কোন জায়গাও নেই। তাই এখন সবাই রেস্টুরেন্টমুখী হচ্ছে।

    অপর একজন শিক্ষার্থী মুন বলেন, রেস্টুরেন্টে খাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, তৈরী খাবার খাওয়া যায় এবং খাওয়ার পর থালা-বাসন ধোয়ার ঝামেলা নেই। বসে আড্ডা দেয়া যায়। তাই এখন ছোটখাটো কোন অনুষ্ঠানে অতিথিকে বাসায় দাওয়াত না দিয়ে রেস্টুরেন্টে দাওয়াত দিই। আর রেস্টুরেন্টে খাওয়া মানে সেলফি তো থাকবেই।

    বিএম…