রংপুরের সড়ক-মহাসড়কে ধান শুকানোর প্রতিয়োগিতা: ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

    সোহেল রশীদ,রংপুর ব্যুরো॥ রংপুর-ঢাকা মহাসড়কসহ রংপুর অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন ধান শুকানো ধুম পড়েছে।

    প্রতিনিয়ত এসব সড়কে চলছে ধান, ভুট্টাসহ খড় শুকানোর প্রতিযোগিতা। আইন বহির্ভুতভাবে এসব শুকানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন নজরদারি। যার ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিভিন্ন ছোট বড় যানবাহন, প্রতিনিয়ত ঘটছে বাইসাইকেল-মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা।

    তবে কৃষকের দাবি ধানের দাম কম হওয়ায় তারা টাকা বাঁচানোর জন্যই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে ধান শুকানোর কাজ করছে।

    সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বারংবার সড়কে এসব মাড়াই ও শুকানোর কাজ বন্ধে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছিল। কিন্তু নানান কারণে এসব নির্দেশনা মানছেন না কৃষকরা। আর এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।

    সরেজমিনে রংপুর-ঢাকা মহসড়কের বিভিন্নস্থানে গিয়ে দেখা যায় ,সড়কে অধিকাংশ জায়গা দখল করে ধান শুকাচ্ছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। আর চলাচল করছে ছোট বড় ভারি যানবাহন। এসব গাড়ির বেপরোয়া গতি যে কোন সময় কেড়ে নিতে পারে যে কারো জীবন।

    এদিকে, সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে তুলনামুলক ধীর গতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বিশেষ করে থ্রী-হুইলার গাড়িগুলো উল্টে যাওয়ার ভয়ে বেশ সতর্কভাবে চলাচল করছে।

    এসময় রাসেদুল নামে একজন অটোচালক অভিযোগ করে বলেন, সড়কে ধান-ভুট্টা বিশেষ করে খড় শুকানোর ফলে আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সবসময় ভবে থাকি কোন সময় যেন ভুট্টায় স্লিপ করে গাড়ি উল্টে যায়। তাছাড়া সড়কে খড় শুকানোর ফলে অটোর ব্যাটারীর চার্য দ্রুত শেষ হচ্ছে যার ফলে আমরা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

    কাউনিয়ার বালাপাড়ার নুর আলম দোয়েল নামের একজন মোটরসাইকেল চালক বলেন, সড়কে এভাবে ফসল শুকানোর ফলে মোটর সাইকেল চালাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুক্ষীণ হতে হয়। কোন বিশেষ প্রয়োজনেও এসব ফললের ওপর দিয়ে দ্রুত মোটর সাইকেল চালিয়ে যাওয়া যায় না। কারণ যে কোন সময় গাড়ি স্লিপ করে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

    তবে আশরাফুল ইসলাম নেতা নামের একজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, এমনিতে যে ধানের দাম তাতে তো আমাদের লোকসান হচ্ছে। তার ওপর যদি চাতালে শুকাই তাহলে খরচ গুনতে হবে যার ফলে আমাদের লোকসান আরো বেশি হবে।

    অন্যদিকে শরিফ মিয়া নামের একজন কৃষক বলেন, আমাদের বাড়িতে জায়গা নাই তাই রাস্তায় ধান শুকাতে নিয়ে এসেছি। কী করবো শুকাতে তো হবে। একজন মহিলা কৃষাণীও বলেন একই কথা। তার কাছে রাস্তায় ধান শুকানো যাবে না তবুও শুকাচ্ছেন কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাবে না সেটা জানি। কিন্তু আমাদের জায়গা নাই দেখেই তো আমরা মহাসড়কে শুকাতে এসেছি।

    সচেতন মহল দাবি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভুমিকা পালন করায় স্থানীয় কৃষকরা ঝুঁকি নিয়েই সড়ক-মহসড়কে ধানসহ বিভিন্ন ফসল শুকাচ্ছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রীয়তা, উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে সড়কের ওপর ধান ও ভূট্টার পাশাপাশি খড় শুকানোর কাজ বন্ধ করা যাচ্ছে না।

    বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রংপুরের অসংখ্য সড়ক এবং মহসড়কে যেভাবে ধান, ধানের খড় শুকানো হয় এটা কোন ভাবেই কল্যাণের নয়। ধান শুকাতে গিয়ে কারো জীবন চলে যাক বা কেউ ঝুঁকির মধ্যে থাক এটা কেউ প্রত্যাশা করে না। আমারা চাই মানুষের জীবন সড়ক পথে নিরাপত হোক।

    তিনি আরো বলেন, এমনিতেই আমাদের দেশে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারণে সড়ক পথে প্রচুর মৃত্যু-প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আর সড়কে এভাবে ফসল ও খড়ক শুকানো নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়কে ধান-খড় শুকানো রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

    নিরাপদ সড়ক চাই রংপুরের সাবেক আহবায়ক হাসান ফেরদৌস বলেন, রাস্তার দু’পাশে ধান এবং ভুট্টাসহ আরো ফসল শুকানোর ফলে ঠিকমত যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। তাদের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বিশেষ করে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ রাস্তায় এসব ফসল শুকানো।

    তিনি আরো বলেন, এনিয়ে আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে, যাতে করে মহাসড়কে ধান শুকানো না হয়। মহাসড়ক যারা দেখাশোনা করে সেসব কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এসব নির্দেশনা পালন করার মত আমরা কাউকেই এখন পর্যন্ত দেখিনি।

    এবিষয়ে জানার জন্য রংপুরের বড়দরগাও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেষ চন্দ্র ও তাজহাট থানার ওসি শেখ রোকনুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করা হলে তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি।

    বিএম/এসআর/এমআর