রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কার্যকর ভূমিকা নিন : প্রধানমন্ত্রী

    মিয়ানমার থেকে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে মুসলিম দেশগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সঙ্গে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওআইসিকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

    আজ শনিবার ভোররাতে সৌদি আরবের মক্কার সাফা প্যালেসে ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।

    ওআইসির ৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের বাদশাহ, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং প্রতিনিধরা অংশ নিচ্ছেন এই সম্মেলনে।

    শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া এই শীর্ষ সম্মেলনে অতিথিদের স্বাগত জানান সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করলে বাদশাহ তাকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

    সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য দেন সৌদি বাদশাহ। সংস্থার মহাসচিবের বক্তব্যের পর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বক্তব্য দেন।

    সম্মেলনে ওআইসির এশিয়া গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিপীড়িত হওয়া এবং তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

    অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ে বর্তমান বিশ্ব যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, তা মোকাবিলায় ওআইসিকে একটি কৌশল গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি, যাতে জোটের সদস্য দেশগুলো একে অন্যের জন্য কাজ করতে পারে।

    শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার রাখাইন অঞ্চলে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন এখনও অনিশ্চিত।

    সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের প্রতি বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ তিনি তা মোকাবেলায় ওআইসির সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা।

    রিয়াদ সম্মেলনে নিজের দেওয়া চারটি প্রস্তাব মক্কা সম্মেলনেও তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হল- অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করা, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভেদাভেদ নিরসন, সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা।
    শেখ হাসিনা বলেন, “ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল অন্ধকার জগতের আলোকবর্তিকা হিসেবে। কিন্তু অপব্যাখ্যার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও সংঘাতের ভাবধারা হিসেবে ইসলামকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।”

    শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “খ্রিস্টান চার্চ আক্রমণের দুঃখভোগী পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়েছি, যে হামলার আমার আট বছর বয়সী নাতি শেখ জায়ানও নিহত হয়।”

    ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতাহীন মানুষ যেভাবে হত্যাকাণ্ডে শিকার হচ্ছে সেসব অসহায় মানুষের বেদনা ও যন্ত্রণার সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
    ওআইসি যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, তা পূরণ না হওয়ার কথাও সম্মেলনে তুলে আনেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, “আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জমি ও সার্বভৌমত্বের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, উম্মাহর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে একাত্মতা ও সহযোগিতা জোরদার করার জন্য লক্ষ্যে ওআইসির জন্য হয়েছিল। কিন্তু সাত দশক পরেও ফিলিস্তিনের সমস্যা এখনও বিদ্যমান এবং এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ এখনও বিভক্ত।”

    মুসলমানদের অমর্যাদা ও দুর্ভোগের অবসানের পথ নির্দেশনা তৈরি করতে সৌদি বাদশাহর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

    শেখ হাসিনা বলেন, “বর্তমান বিশ্বে রয়েছে অর্থনীতি, বাস্তুতন্ত্র ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ। এসব মোকাবেলায় ওআইসিকে একটি বিস্তৃত কৌশল গড়ে তুলতে হবে, যার মধ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অন্যের জন্য কাজ করতে পারে।”

    তিনি বলেন, “পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং যুবশক্তির বেশিরভাগই রয়েছে আমাদের হাতে। আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরেই সমাধান করার সমক্ষতা থাকা উচিত।”

    দরিদ্র্যকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অসঙ্গতি মোকাবেলার জন্য যৌথ ইসলামী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওআইসি -২০২৫ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
    ওআইসির ইন্সটিটিউশনগুলোকে বিশেষ করে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের নীতিমালা ও অনুশীলনগুলোকে ওআইসির এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার উপরও জোর দেন তিনি।

    বিএম/রনী…