লড়াই করেই হেরেছে বাংলাদেশ

    বিশ্বকাপে টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ছাড়িয়ে গেছে নিজেদের আগের রেডর্কও। তারপরেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পাওয়া হল না। ৪৫ রানের হারটা ছোট হার না। কিন্তু বাংলাদেশ খেলেছে জয়ের সমান এক ইনিংস।

    বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেডর্ক আয়ারল্যান্ডের। ২০১১ সালে তারা ইংল্যান্ডের দেয়া ৩২৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করেছিল আইরিশরা। যে রেকর্ড ভেঙে দিতে পারতো বাংলাদেশ, যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরো কিছু রান করতো। আর তাই, অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৮২ রানের টার্গেটেও জয়ের আশা দেখছিলেন অনেকেই। জিততে হলে বাংলাদেশকে আজ করতে হতো ওয়ানডের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৪৩৫ রানের টার্গেটে জিতেছিল তারা।

    রেকর্ড গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। জয়ও পায়নি। কিন্তু, রানের ভারে ভেঙেও পড়েননি ব্যাটসম্যানরা। বুক চিপিয়ে লড়েছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দলের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানকে বার্তা দিয়ে রাখল টাইগাররা।

    সেমির লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জয়টা দরকার ছিল খুব। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে তাই জ্বলে উঠতে হতো বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই।

    কিন্তু, টস হেরে আগে ফিল্ডিংয়ে নেমে বোলারা নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করতে পারলেন না। মাশরাফি, মোস্তাফিজ, রুবেলদের কচুকাটা করে রানের পাহাড় তোলে অজিরা।

    বিশাল বোঝা মাথায় নিয়ে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। যে সৌম্যর হার্ডহিটার ব্যাটের দরকার ছিল খুব, নামের পাশে ১০ রান যোগ হতেই রান আউট হন তিনি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক চাপটা বেশ ভালোভাবেই সামাল দেন তামিম ইকবাল। তাদের ৭৯ রানের জুটি ভাঙে ৪১ রানে সাকিবের বিদায়ের পর।

    মুশফিকের সঙ্গে তামিমের জুটিটা জমতে জমতেই ভেঙে গেল। মিচেল স্টার্ককে কাট করতে গিয়ে ইনসাইড এজ হলেন ৬২ রান করা তামিম। লিটনও বেশিদূর যেতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।

    ১৭৫ এ চার উইকেট হারিয়ে বড় হারের শঙ্কায় থাকা টাইগারদের হয়ে এরপর লড়াই শুরু করলেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ জুটি। সেট হতে কিছুটা সময় নিলেও ঝড় তুলতে বেশি দেরি করেননি তারা। ১২৭ রানের জুটি সমর্থকদের মধ্যে ঢেউ তুলেছেন, ক্ষণে ক্ষণে জয়ের আশাও জাগান।

    কিন্তু ৬৯ রানে মাহমুদুল্লাহ’র বিদায়ের পরপরই কোন রান না করেই সাব্বির রহমান ফিরে গেলে জয়টা হাতছাড়াই হয়ে যায়। নিশ্চিত হরের মধ্যে লড়াই চলছিল আরেকটি। মুশফিকের দায়িত্বশীল ব্যাটিং সেঞ্চুরি না পেলে কষ্টটা আরো বাড়তো। সেটা হয়নি। অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।

    স্কোর:
    অস্ট্রেলিয়া ৩৮১/৫ (৫০)

    ডেভিড ওয়ার্নার ১৬৬ (১৪৭)
    অ্যারোন ফিঞ্চ ৫৩ (৫১)
    উসমান খাজা ৮৯ (৭২)
    গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৩২ (১০)
    মার্কস স্টইনিশ ১৭* (১১)
    স্টিভ স্মিথ ১ (২)
    অ্যালেক্স কারি ১১* (৮)

    বোলার
    মাশরাফি ৮-০-৫৬-০
    মোস্তাফিজ ৯-০-৬৯-১
    সাকিব ৬-০-৫০-০
    রুবেল ৯-০-৮৩-০
    মেহেদী মিরাজ ১০-০-৫৯-০
    সৌম্য ৮-০-৫৮-৩

    বাংলাদেশ ৩৩৩/৮ (৫০)

    তামিম ইকবাল ৬২ (৭৪)
    সৌম্য সরকার ১০ (৮)
    সাকিব আল হাসান ৪১ (৪১)
    মুশফিকুর রহিম ১০২* (৯৭)
    লিটন দাস ২০ (১৭)
    মাহমুদুল্লাহ ৬৯ (৫০)
    সাব্বির রহমান ০ (১)
    মেহেদী হাসান ৬ (৭)
    মাশরাফি মুর্তজা ৬ (৫)

    বোলার

    মিচেল স্টার্ক ১০-০-৫৫-২
    প্যাট কামিন্স ১০-০-৬৫-০
    গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২৫-০
    নাথান কোল্টার-নেইল ১০-০-৫৮-২
    মার্কাস স্টইনিশ ৮-০-৫৪-২
    অ্যাডাম জাম্পা ৯-০-৬৮-১

    ফল: অস্ট্রেলিয়া ৪৮ রানে জয়ী

    সেরা খেলোয়াড় :ডেভিড ওয়ার্নার

    বিএম/এমআর