জনদুর্ভোগ লাঘবে জনগনের পাশে থাকুন : চসিক মেয়র

    চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান সফলতার সাথে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর আওতাধীন বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা থানা ও ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ এবং ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের এক যৌথ সভা গতকাল ১৪ জুলাই রবিবার রাত ৮টায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের সভাপতিত্বে তাঁর উত্তর কাট্টলীস্থ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন।

    সভায় থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদকবৃন্দ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন অভিযানের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তাছাড়া বন্দর পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থিত প্রাইভেট অফডকের কারণে প্রতিনিয়ত বন্দর থেকে বিমান বন্দর সড়কে অসহনীয় যানজট লেগে থাকা, বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খাল-নালা দখল করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন নাগরিক সমস্যাবলী নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য চসিক মেয়রের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

    ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়

    এ সময় নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে আ.জ.ম নাছির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি ওয়ার্ডে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন অভিযান সতর্কতার সাথে পরিচালনা করতে হবে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অবশ্যই সবাইকে মেনে চলতে হবে। তরুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগের নীতি, আদর্শ, উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত করে দলে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। যত বেশী সংখ্যক সদস্য সংগ্রহ করা যায় ততই দল শক্তিশালী হবে। প্রতিটি ইউনিটে কমপক্ষে ১০০ জন সদস্য থাকতে হবে। তবে সদস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনভাবেই দলের নীতি আদর্শের পরিপন্থী, মাদকসেবী, ভূমি দস্যু কিংবা সমাজের বিতর্কিত কোন ব্যাক্তিকে দলের সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা যাবে না। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন বই ফিসহ দলীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার আহবান জানানো হয়। এছাড়া আগস্ট মাস শোকের মাস। এ মাসকে কেন্দ্র করে ১৫ আগস্ট দলের প্রতিটি ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড এবং থানা আওয়ামী লীগকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে শোক দিবস পালন করারও নির্দেশনা দেন তিনি। তিনি বলেন, প্রাইভেট অফডক ইয়ার্ডগুলোর কারণে প্রতিনিয়তই বন্দর পতেঙ্গা এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে ঐ এলাকায় বসবাসরত জনসাধারন এবং কর্মজীবি নারী পুরুষকে নিদারুন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে করে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অপচয় হচ্ছে। বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভায় এসব অফডক সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও এখনো সে সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন ওয়ার্ডে কতিপয় ব্যাক্তি এবং নামী দামী শিল্প প্রতিষ্ঠান খাল-নালা দখল করে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে। এতে করে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনজীবনে ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এসব ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছি। সম্প্রতি পতেঙ্গা এলাকায় এ রকম একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক অবৈধ দেওয়াল আমরা অপসারন করেছি। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। কোনভাবেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগনের দল। জনগনের সুবিধা অসুবিধায় তাই আওয়ামী লীগ সবসময় জনগনের পাশে থাকবে। তিনি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এসব অবৈধ দখলদারের নাম এবং তালিকা তৈরী করার জন্য নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ প্রদান করেন।

    তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে চট্টগ্রামের উন্নয়নে মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে সরকার। সিটি কর্পোরেশন, সিডিএসহ বিভিন্ন সেবাধর্মী সংস্থা এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জাইকার অর্থায়নে সিটি কর্পোরেশন নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এবং পোর্ট কানেকটিং রোডের সংস্কার কাজ করছে। এ দুইটি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বন্দর অভিমূখে হাজার হাজার গাড়ী চলাচল করে। সিটি কর্পোরেশন এই দুইটি সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। অপরদিকে সিডিএ কর্র্তৃক বাস্তবায়নাধীন আউটার রিং রোডের কাজও প্রায় শেষের পথে। এমতাবস্থায় আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এবং পোর্ট কানেকটিং রোডের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ার আগে অথবা বিকল্প সড়ক তৈরী না হওয়ার আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ আপাততঃ বন্ধ রাখার জন্য সিডিএ চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান তিনি।

    সভাপতির বক্তব্যে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন। তাই যারাই এ সংগঠনের সদস্য হবে তাদেরকে দলের নীতি আদর্শের প্রতি অনুগত হতে হবে। কোনভাবেই দলের নীতি আদর্শ বহির্ভূত কাউকে দলের সদস্য করা যাবে না। তিনি কোনভাবেই বিতর্কিত কিংবা সমাজ বিরোধী কাউকে দলের নতুন সদস্য না করার আহবান জানান। তিনি বলেন, বন্দর পতেঙ্গা এলাকার জনগনের ঘুম কেড়ে নিয়েছে অবৈধ অফডক কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো। অফডক ইয়ার্ডগুলোর কারণে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি কার্যত অকার্যকর হতে চলেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বেসরকারী বিমান শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে। প্রতিদিন হজ যাত্রীসহ বিদেশ যাত্রীগণ ফ্লাইট মিস করছে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। বিগত নৌ পরিবহন মন্ত্রী এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ অফডকগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুই বছরের সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার সে সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কার্যত দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। কি কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন নিশ্চুপ হয়ে আছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে চট্টগ্রাম ব্যবসাশুন্য নগরীতে পরিণত হবে। তিনি বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং শিল্প কারখানা কর্তৃক অবৈধভাবে খাল নালার দখলদারের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত অভিযানের প্রশংসা জানিয়ে সারা নগরজুড়ে এ ধরনের অভিযান আরো ব্যাপকভাবে পরিচালনা করার আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, জনগনের দুর্ভোগে সবসময়ই জনগনের পাশে থাকবে আওয়ামী লীগ। যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের মেয়র দলের সাধারণ সম্পাদক সেহেতু জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের পাশে থাকবে দলীয় নেতাকর্মীবৃন্দ। তিনি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসমূহ দ্রুততার সাথে সংস্কার করার জন্য মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এছাড়া আউটার সার্কুলার রোড নির্মাণ করতে গিয়ে যে সকল এলাকায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে সে সব বাঁধ অতিসত্বর খুলে দেওয়ার জন্য সিডিএ চেয়ারম্যানের প্রতি বিনীত আহবান জানান।

    এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাজী জহুর আহমদ কোম্পানী, কার্যনির্বাহী সদস্য নূরুল আলম, কামরুল হাসান ভুলু, সাইফুদ্দীন খালেদ চৌধুরী বাহার, রোটারিয়ান মোঃ ইলিয়াছ, ইপিজেড থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক হাজী হারুনুর রশীদ, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ ইলিয়াছ, ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম, ৪০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চৌধুরী আজাদ, ৩৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ সুলতান নাছির উদ্দিন, ৩৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহবায়ক মোঃ ইসকান্দর মিয়া, ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম, ৩৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক মোর্শেদ আলী, নুর নবী চৌধুরী লিটন প্রমূখ।(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)