‘ঢেলে দেই’ শব্দের বক্তা তাহেরী নজরদারিতে

    বর্তমান সময়ের আলোচিত-সমালোচিত দুটি শব্দ ‘ঢেলে দেই’। ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ট্রল হচ্ছে এই দুটি শব্দ নিয়ে। আর এই ‘ঢেলে দেই’ শব্দের বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী।

    বাংলাদেশের সার্চ ট্রেন্ড বলছে, চলতি মাসের (আগস্ট) ১৮ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত গুগলে ‘ঢেলে দেই’ শব্দ দুটি সার্চ করেছেন প্রায় শতভাগ বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

    তাহেরীর বেশ কয়েকটি ওয়াজে দেখা গেছে, হাতে একটি চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দেন। এরপর বলেন, ‘কেউ কথা কইয়েন না, একটু চা খাব? খাই একটু? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই? (মুচকি হেসে আবারও) ঢেলে দেই? … ‘ভাই পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে? আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? কারোর বিরুদ্ধে বলতেছি? এরপরও সকালে একদল লোক বলবে, তাহেরী বালা (ভালো) না।’

    বক্তব্যের মধ্যে অশ্লীল ভঙ্গিও করেন তিনি। সেই সঙ্গে নাচ-গানসহ আরও বিনোদনমূলক কথাবার্তা। ওয়াজের সময় এভাবে বিনোদন দিয়ে বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে তাহেরী।

    তাহেরি কে, কেন তিনি এ ধরণের অঙ্গভঙ্গি কিংবা অশালীন বক্তব্য দিচ্ছেন তার তথ্য ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই ধর্মীয় বক্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।

    বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে পুলিশ হেডকোয়াটার্স এর এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা গণমাধ্যম বলেন, আমরাও এমনটি দেখেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছেন সে বিষয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।

    মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রতিটি ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের জন্য স্ব স্ব জেলার ডিসি কার্যালয়ের অনুমতিপত্র, থানা পুলিশসহ কয়েকটি দফতরে অবগত করতে হয়। তাহেরীর বিষয়ে ওয়াজ মাহফিলে অশ্লীল কথা ও অশ্লীল ভঙ্গি করার বিষয়টি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এসেছে। এরপর থেকে দেশের কয়েকটি জেলায় তার ওয়াজ মনিটরিং করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেধে দেয়া কিছু নিয়ম মেনে ওয়াজের বক্তারা কথা বলছেন কি-না, সেটিও নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) আবু বকর ছিদ্দীক গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেকোনো ওয়াজ ও ওয়াজের বক্তাকে নিয়মিত ফলোআপ করা হয়। সাইবার সেল এ নিয়ে কাজ করছে। তারা রিপোর্ট করলে তাহেরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে, মুফতী মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি দাওয়াতে ‘ঈমানী বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। রায়পুরার মাস্তানগঞ্জ নামক একটি মহল্লায় খাজা বাবার দরবার নাম দিয়ে এখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি আস্তানা গড়ে তুলেছেন। সেখানেই তিনি ওয়াজ করে এবং অশালীন বক্তব্য দেয়।

    গোয়েন্দারা জানায়, এটিই প্রথম না ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জিকিরের সময় নেচে-গেয়ে ‘বসেন বসেন, বইসা যান’ বলায় সমালোচিত হন তাহেরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে তৈরি হয়ে নানা ট্রল ও ভিডিও। এরপর কিছুদিন ওয়াজ বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। তবে ‘ঢেলে দেই’ শব্দ দুটি দিয়ে আবারও আলোচনায় তিনি।

    বিএম/এমআর