নতুন চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
    ব্র্যাক থেকে অবসর নিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ

    বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসর নিয়েছেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

    মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে এক নৈশভোজ অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

    ঘোষণায় আরো জানানো হয়, চেয়ারপার্সপনের পদ ছাড়লেও তিনি সংস্থাটির সম্মানসূচক ‘চেয়ার এমিরেটাস’ পদে থাকছেন।

    এক্ষেত্রে ব্র্যাক বাংলাদেশের নতুন চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক।

    ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

    এদিকে চেয়ারপারসনের পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আসছে।

    ব্র্যাকের নতুন পর্ষদে রয়েছেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আদিব এইচ খান, ইরিন খান, শফিকুল হাসান, ফাউজিয়া রশীদ, মালিসা পার্ক, কায়সার জামান ও ফাহিমা দাদা।

    গত সপ্তাহেই ব্র্যাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান আসিফ সালেহ। তিনি ইতিমধ্যে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।

    ব্র্যাকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

    মঙ্গলবার বিদায় নেওয়ার সময় স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর আমি ব্র্যাকে আমার পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে অনেক ভেবেছি এবং সেইমতো প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন আমার বয়স ৮৩ বছর। ব্র্যাককে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কাজে যথাযোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি ছিল আমার সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গর্ব এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, যাতে আমার অবর্তমানেও ব্র্যাক তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘ব্র্যাক কখনোই কোনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। আমি এর প্রতিষ্ঠাতা ঠিকই, কিন্তু ব্র্যাকের সুদৃঢ় ভিত্তি ও সুনাম তৈরি করেছেন এর নিবেদিত কর্মীরা, তাদের প্রত্যয় ও কর্মনিষ্ঠা দ্বারা। এত বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার, সমমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, দাতাসংস্থা এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত ও কৃতজ্ঞ। আগামী দশ বছরে আমরা আমাদের কাজের প্রভাব পৃথিবীর আরও বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি স্বপ্ন দেখি, ব্র্যাক আগামীতে আরও বড় হয়ে উঠবে, নতুন উদ্ভাবন চালিয়ে যাবে, নতুন দিনের প্রয়োজনে এগিয়ে আসবে নতুন সমাধান নিয়ে।’

    ৮৩ বছর বয়সী ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাকের পাশাপাশি ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদেও চেয়ারপারসনের পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি শারীরিকভাবে সক্ষম আছেন। তিনি এখনো অনেক কাজ করেন। এরপরও তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির ভালো পরিচালনার প্রয়োজনে।

    মঙ্গলাবার নৈশভোজের ওই অনুষ্ঠানে ফজলে হাসান আবেদের বিদায়ের ঘোষণার সময় বেশ কয়েকজন অতিথি ছিলেন। সেখানে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূসও উপস্থিত ছিলেন। ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারপারসনের পদে অধিষ্ঠিত হতে যাওয়া হোসেন জিল্লুর রহমান ওয়ান ইলেভেনের পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ১১ মাস উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন।

    ১৯৭২ সালে ফজলে হাসান আবেদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ব্র্যাক। এ এনজিওটি এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও হিসেবে স্বীকৃত। এশিয়া, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ডজনখানেক দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন বিশেষ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্বাবলম্বী করার প্রয়াসে বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটির (ব্র্যাক) কার্যক্রম শুরু হয়। গণশিক্ষা থেকে শুরু করে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের মতো কাজের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত হয় ব্র্যাকের কার্যক্রম।

    অনেকেই মনে করেন, ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হোসেন আবেদের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত।

    অনেক ডিগ্রি আর স্বীকৃতি আছে তার জীবনে। ১৯৮০ সালে ম্যাগসেসে পুরস্কার পাওয়ার পর জীবনে অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, স্পেনিশ অর্ডার অব সিভিল মেরিট, লিউ টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল ইত্যাদি। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের নির্বাচিত ৫০ বিশ্বনেতার মধ্যে ফজলে হাসান আবেদের নাম স্থান পেয়েছিল।

    ফজলে হাসান আবেদের জন্ম ১৯৩৬ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামে। তার উচ্চতর পড়াশোনা হয় লন্ডনে, হিসাব বিজ্ঞানে। পড়াশোনার পর তিনি একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পাকিস্তান শাখায় যোগ দিলেও ১৯৭০ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বদলে দেয় তার জীবনপথ। চাকরি ছেড়ে তিনি চলে যান লন্ডনে, সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত গঠনে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ফিরেই দেশ পুনর্গঠনে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করে কাজে নেমে পড়েন।

    দারিদ্র বিমোচন ও দরিদ্রের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার ফজলে হাসান আবেদকে নাইটহুডে ভূষিত করেন।

    বিএম/এমআর