দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হচ্ছেনা : গয়েশ্বর

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এই সমস্যা অনেক দেশেই আছে। ৭১ সালে আমরাও শরণার্থী হিসেবে আরেক দেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর আমরা নিজেরাই সে দেশ থেকে চলে এসেছি। আমাদেরকে কারো জোর করে পাঠাতে হয়নি। অথচ আজকে যে রোহিঙ্গারা এসেছে তাদের প্রত্যাবাসন করতে পারছে না। এটা সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে এমনটি হয়েছে।’

    বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল (বিডিসি) কর্তৃক আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সংকট নিরসনের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

    রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সকলকে দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ কাজ করার আহবান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটা জাতীয় সমস্যা এবং একটি দেশের সমস্যা। এটি কোন একটি রাজনৈতিক দলের সমস্যা নয়। এটি সমাধানে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে চিরস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হবে।’

    তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই এবং দুর্নীতিতে ভরে গেছে। দুর্নীতির কারণেই আজকে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রবণতা বেশি এবং ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা বেশি থাকার কারণ বিনা ভোটে একবার ক্ষমতায় গেলে কোটি কোটি টাকা কামানো সম্ভব। তখন আইজিপি এসেও সালাম দেয়। আর আমি যতো বড় লোকই হইনা কেন যখন ক্ষমতায় নেই তখন কনস্টেবল এসেও মাথায় বাড়ি দিবে। সুতরাং এই যে বৈষম্য নাগরিকতার ক্ষেত্রে এই বৈষম্যগুলোই আজকের অস্থিরতার শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে।’

    তিনি বলেন, ‘এখনতো গুজবের শেষ নেই; এই আসছেন, এই যাচ্ছেন, বোন হচ্ছেন না মেয়ে হচ্ছেন, কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী এসব গুজবের কোনও শেষ নেই। যাওয়া-আসার মধ্যে নীরবতা, আসার পরে প্রেসব্রিফিং করা, এখন একা একা যাওয়া, এই যে কত রকমের কথা ডালপালা চারিদিকে ছড়াচ্ছে এই ছড়ানোর মধ্য দিয়েই সবার মধ্যেই তাকাতাকি, যে কি জানি হচ্ছে।’

    ‘সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা নিজেদের মধ্যে তাকাতাকি এই বুঝি কিছু হচ্ছে এবং নিজেদের মধ্যেই অস্বস্তি আতঙ্ক বিরাজ করছে। কি জানি ‘আপার’ কি হইছে, কোন দিন কারে ক্ষমতা দিয়া জায়গা নাকি এইসব চলছে।’

    বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘এইরকম একটা দুরবস্থার মধ্যেও একটু সাহসের অভাবে আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তিরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে তাদের ধাক্কা দিতে পারছি না। এখনও মনে হয় ভালোবাসা কিঞ্চিত, সুযোগ যদি পাই তাহলে আমি দুটি রাত বাড়িতে সুন্দর ভাবে কাটাতে পারি, ভালো ভাবে চলতে পারি। এখনও আদালতে গেলে ভাবি জামিন মনে হয় দিবে না। কেন এত ভয়, কিসের ভয়, কিসের ভয়, মৃত্যু ছাড়া আর মানুষের জীবনে ভয় পাওয়ার কিছু আছে। মৃত্যু তো প্রত্যেক জীবনের হবে এটা অবধারিত। মৃত্যুকে আমি যতই ভয় পাই না কেন মৃত্যুকে তো আমি অবহেলা অবজ্ঞা করতে পারব না। সে কারণেই আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিটি মানুষের ভয় কে জয় করার মানসিকতা তৈরি করার দরকার।’

    বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আজকে রোহিঙ্গারা সভা-সমাবেশ করেছে, কিন্তু আমরা সভা করতে পারছি না। আমরা ইঁদুরের মতো লুকিয়ে সভা করছি আর মুখে বড় বড় কথা বলছি। এটা বোকামির কাজ। রোহিঙ্গাদের দেখে আমাদেরও মাঠে নামা উচিৎ।’

    রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকার তার ব্যর্থতাকে ঢাকবার জন্য মানুষের ইমোশনকে অন্যদিকে তাড়িত করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

    জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবাই চাই রোহিঙ্গারা চলে যাক, কিন্তু গলা ধাক্কা দিয়ে নয়, অকারণ অপবাদ দিয়ে নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আমাদের উচিৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাজে লাগানো এবং আমাদের মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা। অন্যদিকে চীনের উপরে সঙ্গবদ্ধভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’

    সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ২৫ (ক) অনুচ্ছেদে এ লিখা রয়েছে যে কোনো দেশের যে কোনও জায়গার জাতিগোষ্ঠী আত্মঅধিকারের জন্য সংগ্রাম করলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো। এটা আমাদের নিজেদের স্বকৃত বক্তব্য। আজকে রোহিঙ্গারা মুসলমান হোক বা যে জাতিই হোক তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

    বিএন‌পির যুগ্ম মহাস‌চিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়া‌জ্জেম হো‌সেন আলাল ব‌লেছেন, ‘বর্তমা‌নে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা জাতীয় প‌রিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ ক‌রে‌ছে। জনগণ জানতে চায়- রোহিঙ্গারা এসব এনআইডি কার্ড কীভা‌বে সংগ্রহ কর‌লো? এই সরকারকে জনগ‌ণের কা‌ছে সব হিসাব একদিন পাই পাই ক‌রে দি‌তে হ‌বে।’

    ‌তি‌নি ব‌লেন, ‘জনগণ যখন হিসেব নে‌বে তখন পে‌টের ভেতর থে‌কে সব হিসেব বের ক‌রে তার প‌রে বিচার কর‌বে।’

    আলাল বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এর আগেও বাংলাদেশে এসেছিল। তখন তারা তো থাকতে পারেনি, এনআইডি কার্ড পায়নি। কিন্তু বর্তমানে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা এনআইডি কার্ড করেছে। তারা এই কার্ড কোথা থেকে পেলো? এত টাকা কোথা থেকে পেলো? জনগণ এই হিসাব একদিন পাই পাই করে নেবে।’

    এ সময় তিনি একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের বোনদেরকে আন্ডার গার্মেন্টস পরিয়ে বাংলাদেশের পতাকা হাতে দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আর সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী প্রত্যেক জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে চেহারা দেখিয়েছে। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনের বিষ‌য়ে কেউ কোনও মন্তব্য করেনি। এটাই কি স্বাধীন বাংলাদেশ? এই জন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছি? পতাকা‌কে অপমান করার জন্য, দেশ‌কে অপমান করার জন্য?’

    আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এমএ হালিমের সভাপতিত্বে এবং কৃষক দল নেতা এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য গবেষণা বিষয়ক সহ- সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।