বাইকার মিলনের হত্যাকারী আটক

    মালিবাগ ফ্লাইওভারে চালককে হত্যা করে মোটর সাইকেল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় রহস্য উদঘাটনের কথা জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

    তারা বলেন, রামপুরার আবুল হোটেল থেকে গুলিস্তান যেতে ৫০ টাকায় চুক্তি হয়। আর ফ্লাইওভারের ওপরে কাগজ কাটার এন্টিকাটার দিয়ে গলা কাটা হয় মোহাম্মদ মিলনের।

    ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে গত রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে নুর উদ্দিন সুমনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। উদ্ধার করা হয় নিহত মিলনের মোটর সাইকেল এবং মোবাইল ফোন।

    বাইকার মিলন

    সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বর্ণনা দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন।

    এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, আটক নুর উদ্দিন তাদের কাছে খুনের অভিযোগ স্বীকার করে ঘটনা কীভাবে ঘটেছে সেটাও জানিয়েছেন।

    মিলন তার মোটর সাইকেলে অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী বহন করতেন। তবে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার কারণে পরে অ্যাপের বদলে চুক্তিতে যাত্রী বহন করতে শুরু করেন।

    উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল

    পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট দিবাগত রাত তিনটার দিকে এক যাত্রীকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় নামিয়ে দেন মিলন। সেখান থেকে তিনি যাচ্ছিলেন গুলিস্তানের দিকে। মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের উঠতে আবুল হোটেলের ঢালে তাকে থামান নুর উদ্দিন। গুলিস্তান যাবেন বলে ৫০ টাকায় ভাড়া ঠিক করে উঠেন মোটর সাইকেলে।

    ফ্লাইওভারের সবচেয়ে উপরের সড়কে পৌঁছালে মোটরসাইকেল থামাতে বলেন নুর উদ্দিন। বলেন, তিনি সেটি চালাতে চান। বাইকার মিলন রাজি না হলে দুই জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়।

    গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাতেন বলেন, ‘সুযোগ বুঝে নুর উদ্দিন এন্টিকাটার (কাগজ কাটার ধারাল ছুরি) দিয়ে মিলনের গলায় উপর্যুপরি আঘাত করে ফ্লাইওভারে রেখে মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে চলে যান।’

    কাটা গলা নিয়ে মিলন ফ্লাইওভার থেকে কোনো রকমে নিচে নেমে আসার পর তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে নেয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

    মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতেন মিলন। শুরুতে মোবাইল অ্যাপে যাত্রী বহন করলেও পরে তিনি চুক্তিতে যাত্রী বহন শুরু করেন। এভাবে পরিচয় নিশ্চিত না করে কাউকে বাইকে তোলা যে নিজের জীবনের জন্যও হুমকি হতে পারে, সে ঝুঁকিটি তিনি অগ্রাহ্য করেছিলেন।

    ঝুঁকি অগ্রাহ্য করতে গিয়ে মিলন নিজের জীবন হারানোর পাশাপাশি স্ত্রী এবং দুটি সন্তানের জীবনকেও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে গেছেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে মিরপুর-১ গুদারাঘাট এলাকায় থাকতেন।

    গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাতেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে মিলন হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন নুর উদ্দিন। আর তার কাছ থেকেই মিলনের ব্যবহৃত স্যামসাং জে ফাইভ মোবাইল সেট, দুইটি হেলমেট ও ডায়াং ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

    মিলন অ্যাপে যাত্রী তোলেননি বলে তিনি কাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন সেটি শনাক্তে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়। যেখানে এই বাইকার খুন হয়েছেন, সেখানে কোনো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ছিল না। পরে উড়াল সড়কের উঠা এবং নামার পথে যে ক্যামেরা আছে, সেখান থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে খুনিকে শনাক্তের চেষ্টা চালায় গোয়েন্দারা।

    ডিবি কর্মকর্তা বাতেন বলেন, ‘হত্যার ঘটনার পর শাহজাহানপুর থানায় মামলা হলে তদন্তে নামে গোয়েন্দা বিভাগ। ঘটনাস্থলে কোন সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বা প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় এবং রাতের নির্জনে হওয়ায় ক্লুলেস ঘটনায় অপরাধীকে শনাক্ত করা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু ডিবি পুলিশ সেই কঠিন কাজটি সফলতার সাথে করেছে।’

    ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ২ সেপ্টেম্বর রাত তিনটায় শাহজাহানপুর থানা এলাকা হতে অভিযুক্ত নুর উদ্দিন ওরফে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

    বিএম/এমআর