ভারতের চন্দ্রযান মিশন ব্যর্থ

    ভারতের চন্দ্রযান-২ এর অবতরণের কয়েক সেকেন্ড আগেই এর ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

    প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে প্রথম দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় ছিল ভারত, তবে রাত ১.৫৫টার দিকে জানা যায় মিশন সফল হচ্ছে না।

    এমন ঘটনায় উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখছেন তারা। ইসরো জানিয়েছে, চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ২ কিলোমিটার ১০০মিটার দূরত্বে শেষ সঙ্কেত পাওয়া যায় ল্যান্ডার বিক্রমের থেকে।

    ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পূর্ব পরিকল্পনা রাত ১টা৩৮ মিনিটে শুরু হয় বিক্রমের অবতরণ প্রক্রিয়া। সেকেন্ডে ১.৮ কিলোমিটার থেকে যানের গতিবেগ কমিয়ে আনা শুরু হয় শূন্যে। সেই লক্ষ্যে শুরু হয় হার্ড ব্রেকিং। নিখুঁত হার্ড ব্রেকিং পর্বের পর ফাইন ব্রেকিং পর্ব শুরু হতেই দেখা দেয় বিপর্যয়। সেই পর্যায়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ইসরোর কন্ট্রোল সেন্টারের সঙ্গে যাবতীয় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যানটির।

    ইসরোর প্রধান কে শিবান বলেন, ‘বিক্রম ল্যান্ডার ছিল পরিকল্পিত এবং ২.১ কিলোমিটার পর্যন্ত স্বাভাবিক লাগছিল। পরবর্তীকালে, পৃষ্ঠের সঙ্গে ল্যান্ডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’

    রাত ১ টা ৪০ নাগাদ কক্ষ ছেড়ে চাঁদে নামতে শুরু করে ল্যান্ডার বিক্রম। ইসরো সূত্রে বলা হয়েছিল, সব ঠিক থাকলে রাত ১টা ৫৩ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রাখবে ভারতের চন্দ্রযান।

    সে সময় ইসরোর কন্ট্রোলরুমে বিজ্ঞানীদের সাথেই অবস্থান করছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাদের সঙ্গে বসে চাঁদে নামার অভিযান সরাসরি দেখছিলেন তিনি।

    মিশন ব্যর্থ হওয়ার খবর শুনে বিমর্ষ হয়ে ইসরো থেকে বেরিয়ে যান মোদী।

    তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মোদী ভারতীয় বিজ্ঞানীদের উদ্দ্যেশে বলেন, ‘আপনাদের জন্য গর্বিত দেশ।’ চন্দ্রপৃষ্ঠ ছোঁয়ার কয়েক সেকেন্ড আগেই চন্দ্রায়ণ ২ এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার ঘটনাটি মোদীকে জানান ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবান। ইসরোর কন্ট্রোলরুমে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘এটা জীবনের উত্থান ও পতন। এটা কম কৃতিত্ব নয়। আমি আপনাদের অভিন্দন জানাই।’

    নরেন্দ্র মোদি বিজ্ঞানীদের বলেন, এটা জীবনের উত্থান ও পতন। এটা কম কৃতিত্ব নয়। আমি আপনাদের অভিন্দন জানাই।

    আপনারা সবাই দেশ, বিজ্ঞান ও মানুষের জন্য দারুণ কাজ করেছেন, সবরকমভাবে আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি, সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলুন।

    মোদি আরও বলেন, আগামী দিনেও ভারত মহাকাশে বিক্রম দেখবে। তার কথায় , ভবিষ্যতে অভিযান করব। আমি আপনাদের পাশে। হিম্মত রাখুন। আপনাদের সাহসে দেশ আরও আনন্দ করবে।

    প্রসঙ্গত, রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা ছিলো চন্দ্রযান-টুয়ের ল্যান্ডার বিক্রমের। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসার কথা ছিলো রোভার ‘প্রজ্ঞান’। এরপরই চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘরে তথ্য যোগাড়ের কাজ শুরু করতো এই রোভার।

    গত ২২শে জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে চন্দ্রযান টু উৎক্ষেপণ করে ইসরো। চাঁদের মাটিতে পা দেয়া চতুর্থ দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়বে ভারত ৷ এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল।

    ২০০৮ সালে ভারত প্রথম মহাকাশযান চন্দ্রযান-ওয়ান উৎক্ষেপণ করে। তবে এটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেনি।

    বিএম/এমআর