প্রবাসীদের বিশেষ নাগরিক মর্যাদা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সুজনের আহবান

    নিউজ ডেস্ক :বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী প্রবাসীদের বিশেষ নাগরিক মর্যাদা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট বিনীত আহবান জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ ৬ই নভেম্বর বুধবার বিকাল ৪ টায় জামালখানস্থ একটি বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়ে চট্টগ্রামের জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসরত প্রবাসীদের সাথে বিমান বন্দরে যাত্রী হয়রানি, বিভিন্ন ধরনের দুর্ভোগ এবং ভোগান্তি নিয়ে মতবিনিময় করেন।

    এ সময় জনাব সুজন বলেন, প্রবাসীরা হচ্ছে দেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি। তারা আনুষ্টানিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে এমনকি অনানুষ্টানিকভাবেও তাদের অবদান প্রচুর। বিদেশের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী চাকুরী এবং ব্যবসা বানিজ্য করে বিপুল পরিমান টাকা পয়সা উপার্জন করছে। তাদের কষ্টার্জিত টাকাগুলো বৈধ পথে দেশে পাঠাতে গেলে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাই হুন্ডি কিংবা অনানুষ্টানিক মাধ্যমে টাকাগুলো দেশে পাঠাতে হয়। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়েই দেশের অর্থনীতির চাকা চলমান রয়েছে। বিদেশ বিভুঁইয়ে পরিবার পরিজন থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে থেকে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত। অথচ সেই প্রবাসীরা নিজ দেশে সবচেয়ে অবহেলিত, নির্যাতিত এবং নিগৃহীত। যখন তারা জীবিকার তাগিদে দেশের বাইরে যান তখন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকতাগণ তাদের সাথে নির্মম অমানবিক নির্যাতন করে থাকে। এমনকি আইনসিদ্ধভাবে বিদেশ গমণকারীদেরও আর্থিক উৎকোচ দিয়ে বিমান বন্দর অতিক্রম করতে হয়। এছাড়াও প্রবাসীরা যখন সাময়িক বিনোদনের জন্য দেশে ফিরে আসে তখন বিমান বন্দরে তাদেরকে পদে পদে হয়রানি এবং সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রায়শই বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রবাসীদের সাথে চোর ডাকাতের মতো আচরন করে। বিমানবন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে বোর্ডিং লাউঞ্জ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধাপে প্রবাসী যাত্রীরা হয়রানির শিকার হন। তাছাড়া বিদেশ ফেরত যাত্রীরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মালামাল সংগ্রহের পর্যাপ্ত সময়সূচীও পান না ফলতঃ একজন যাত্রীকে মালামাল সংগ্রহের জন্য দুই থেকে তিনবার বিমান বন্দরে আসা যাওয়া করতে হয়। অনেক সময় প্রবাসীরা ব্যাগেজের তালা ভাঙ্গা পান যাতে পন্যও খোয়া যায়। কথাবার্তা ছাড়াই পরীক্ষার নামে প্রবাসীদের ব্যাগেজ খুলে নষ্ট করে ফেলা হয় এবং প্রায়শই অসৌজন্যমূলক আচরন করা হয়। এ সব অযাচিত হয়রানি থেকে বাঁচতে নগদ টাকা দিয়ে মুক্ত হন প্রবাসীরা। তাছাড়া প্রবেশ এবং বাহিরের সময় আনসার বাহিনীর সদস্যরাও বিভিন্নভাবে প্রবাসীদের হয়রানি করে। প্রবাসীদের ব্যাগ লাগেজ এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর স্থানীয় থানা পুলিশ পূণরায় চেকিং এর নামে অযথা প্রবাসীদের হেনস্থা করে যেন একেকজন প্রবাসী একেকটি সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। তিনি প্রবাসীদের জন্য ভিআইপি এবং সিআইপিরা যেভাবে সেবা পেয়ে থাকে ঠিক একইভাবে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আলাদা কাউন্টার স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান। দেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত পন্য ছাড়া নানাবিধ পন্য যাতে প্রবাসীরা সহজেই আনার অনুমতি পান সে ব্যবস্থা করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। এছাড়া বিদেশী দূতাবাসগুলোও প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে কিনা তা মনিটরিং করারও আহবান জানান। তিনি বিদেশে যে সকল চাকুরীর চাহিদা রয়েছে সে সকল চাকুরীতে প্রবাসীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি নিশ্চিত করার জন্য ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট স্থাপনের দাবী জানান। তাছাড়া প্রবাসীদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কোটা বরাদ্ধেরও আবেদন জানান। জনাব সুজন অনতিবিলম্বে দেশের সকল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে প্রবাসী যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ করার জন্য জোর দাবী জানান। তিনি আরো বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়ভাবে বিভিন্ন অবদানের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছেন ঠিক তেমনিভাবে প্রবাসীদেরও বিশেষ মর্যাদা প্রদানের জন্য আকুল আবেদন জানান। এছাড়া প্রবাসীদের প্রবাসী কার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে ৬০ বৎসরের বয়সসীমা সিথিল করার অনুরোধ জানান জনাব সুজন।

    সভা শেষে প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া এবং সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের জন্য একটি প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ গঠন করা হয়। সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি উক্ত পরিষদের সমন্বয় করবেন। সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের সাথে আরো ব্যাপক যোগাযোগের মাধ্যমে আগামী মাসে একটি বৃহৎ আকারে কনভেনশন করার ঘোষনা দেন। পরবর্তীতে প্রবাসীদের বিভিন্ন অভাব অভিযোগ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে অবহিত করেন।

    এ সময় বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ.জে.এম জাহাঙ্গীর, জাকের হোসেন, এস.এম মুছা মিরদাদ, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক মোঃ আবু হেনা, হোসেন সৈয়দুর জামাল চৌধুরী, কামাল উদ্দিন আহাম্মদ, সহিদ উল্লা চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা, জাকের হোসেন, জামাল উদ্দিন, মোঃ ইসহাক, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, মোঃ নিজাম উদ্দিন, মোরশেদ আলম, সমীর মহাজন লিটন প্রমূখ।