ভারতের সিএএ এবং এনআরসি আইনভারতের সিএএ এবং এনআরসি আইন
    প্রতিবাদের মাশুল ২৫টি তাজা প্রাণ, সবকটি মৃত্যু বিজেপি শাসিত রাজ্যে

    ভারতের সিএএ এবং এনআরসি আইন

    ভারতে সম্প্রতি পাস হওয়া নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯ (সিএএ) এবং প্রস্তাবিত দেশব্যাপী জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ-প্রতিবাদে পঁচিশ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।

    বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালানোর পর বেশিরভাগ মৃত্যুর খবর উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছে। যদিও গোটা ভারতের প্রায় সব রাজ্যে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে কেবল বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো থেকে।

    আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন যে, অন্যান্য রাজ্যে বিশাল সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতার কোনো  ঘটনা ছাড়াই হয়েছে। কিন্তু ২৫টি তাজা প্রাণ গেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে।

    দেখে নেওয়া যাক কবে এবং কোথায় মানুষকে প্রতিবাদের মূল্য দিতে হলো প্রাণ দিয়ে:

    ডিসেম্বর ১২ : আসামে অত্যাচার
    গত ১১ ডিসেম্বর সংসদে বিতর্কিত এই আইন পাস হওয়ার পরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম রাজ্যে পুলিশের গুলিতে মারা যায় চারজন। গুলিতে মারা যাওয়া মানুষদের তালিকায় ছিলেন ১৭ বছরের সাম স্টাফোর্ড। আরো ছিলেন আসামের সিএএ বিরোধী আন্দোলনের ‘প্রথম শহীদ’ হিসাবে ঘোষিত ১৭ বছরের ছেলে দিপঞ্জল দাস।

    স্টাফোর্ড এমন একজন সংগীতশিল্পী ছিলেন যিনি এই বছর তার স্কুল শেষের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। লাতাসিল মাঠে, একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার পরে তিনি যখন হাতিগাঁয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন একটি গুলি তার মুখে লেগেছিল। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

    ছাইগাঁওয়ের বাসিন্দা দীপাঞ্জল লাচিত নগরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পেটে গুলি লাগে তার। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হলেও পথেই মারা যান তিনি। দীপাঞ্জল জেলা সৈনিক কল্যাণ বোর্ডে ক্যান্টিনে রান্নার কাজ করতেন। এটি একটি সরকারি সংস্থা যা ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা নিযুক্ত সেনাদের জন্য কাজ করে।

    আবদুল আমিন (২৩) এবং ঈশ্বর নায়ক (২৫) নামের আরও দুজন রয়েছেন মৃতদের তালিকায় যারা রাজ্যে বিক্ষোভ চলাকালীন প্রথমে আহত হন এবং পরে মারা যান।  আমিনের পেটে একটি গুলি লেগেছিল এবং নায়কের কোমরে গুলি লাগে।

    সিপাজাহারের মুসলিম ঘোতার বাসিন্দা ট্রাকচালক আজিজুল হক (৪৫) অবশ্য পুলিশের সহিংসতার কারণে প্রাণ হারাননি । কিছু দুর্বৃত্ত তার ট্রাক জ্বালিয়ে দেয় এবং সেই ট্রাকের ভেতর উনি জীবন্ত দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।

    ডিসেম্বর ১৯ : ম্যাঙ্গালোরে মৃত্যু 
    ওই দিন সিএএ এবং এনআরসি’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হন। তারা জালিল কুদ্রোলি (৪৯) এবং নওশীন বেনগ্রে (২৩)। মারা যান ভারতের কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর শহরে। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তাদের একজনের চোখে এবং অন্যজনের বুকে গুলি লাগে।

    পুলিশ অভিযোগ করেছে যে, বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর পাথর দিয়ে আক্রমণ করেছিল এবং ম্যাঙ্গালোরে উত্তর থানায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ কমিশনার পিএস হর্শা পুলিশি পদক্ষেপকে ‘শক্তির বৈধ ব্যবহার’ বলে অভিহিত করেছেন।

    তবে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। স্থানীয় নিউজ চ্যানেলগুলোর প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে এমনও বলা হয়েছে যে, যারা শান্তিপূর্ণ মিছিলেও পুলিশ মারধর করেছে এবং পরে গুলি চালিয়েছে।

    ডিসেম্বর ১৯ : উত্তরপ্রদেশে মৃত্যু মিছিল 
    বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে উত্তর প্রদেশজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। ভারতের মিডিয়ার খবর অনুযায়ী , ইউপিতে ১৮ জন মারা গেছেন। তবে কিছু মিডিয়া এই সংখ্যাটি বলেছেন ১৬। রাজ্যে মারা যাওয়াদের মধ্যে মোহাম্মদ সাগের নামের আট বছরের বালকও ছিল।

    ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ইউপিতে যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল তাদের নাম প্রকাশ করেছে- লখনউতে মোহাম্মদ ওয়াকিল (৩২), কানপুরে আফতাব আলম (২২) এবং  মোহাম্মদ সাইফ (২৫), বিজনরে আনস (২১) এবং সুলেমান (৩৫), সাম্ভালে বিলাল২৪) ও মোহাম্মদ শেহরোজ (২৩), মিরাটে জহির (৩৩), মহসিন (২৮), আসিফ (২০) এবং আরিফ (২০),  ফিরোজবাদে নবী জাহান (২৪)  এবং রামপুরে ফয়জ খান (২৪), রশিদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তি ফিরোজাবাদে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যান এবং কানপুরে বিক্ষোভ চলাকালীন গুলিতে মারা যান ২৮ বছর বয়সী এক এইচআইভি রোগী।

    মৃতদের পরিবারগুলো ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে হয়েছে, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে। ইউপি পুলিশ দাবি করেছে যে বিক্ষোভকারী মারা যান তারা নিজেদের মধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। তার প্রমাণ হিসেবে পুলিশ বলেছে ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় বুলেট পাওয়া যায়। তবে নিহতদের পরিবার এই দাবিটি খারিজ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে তারা পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিল।