বিশ্বের ভাগ্যকাশে করোনাক্রান্ত্রি রেখা

    সায়েক এম রহমান ::

    এক. আজ থমকে গেছে পৃথিবী! থমকে গেছে মানুষ! নিস্তব্ধ দুনিয়া! স্তব্ধ হলিউড বলিউডের অর্ধ নগ্ন পূর্ণ স্টার।স্তব্ধ হার্ট থ্রপ কাঁপানো নাইট ক্লাবগুলো। স্তব্ধ এই বিশ্বের নয়নাভিরাম হলিউডে স্পষ্ট। বিশ্বের মেগা সিটিগুলি ভুঁতুড়ে নগরীতে পরিণত। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! দুনিয়ার উপাসনালয় মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, বন্ধ! এ সবই বন্ধ। শুধুই খোলা আছে দুনিয়ার সব হাসপাতালয়, ঔষধালয়! শুধু লাশ আর লাশ। দিকে দিকে লাশ! গণকবরে লাশ দাফন করতে হচ্ছে। এই লিখাটি লেখা পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন প্রায় দুই লক্ষ মানুষ এবং আক্রান্ত আছেন প্রায় পঁছিশ লক্ষের উপরে। এ সবই হচ্ছে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা ক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের জন্য! আজ বিশ্ব করোনা ভাইরাসের কাছে পরাজিত। বিশ্বের ক্ষমতাধর যে সব রাষ্ট্রের হুংকারে দুনিয়া কেঁপে উঠতো, যারা চাহিবা মাত্র কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করা কোন ব্যপার না। তারাই আজ ছোট্ট করোনার কাছে বড় অসহায়। তারা থরথর করে কাঁপছেন, হিমশিম খাচ্ছেন। আজ যেন সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে চলেছে।
    আজ কোথায় বিশ্বের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রের তাদের বাজেটের বড় অংকের মানুষ মারার যন্ত্রগুলো? চুপচাপ বসে আছে! বড় বড় যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন, অত্যাধুনিক ফাইটার্স, রকেট, নিউক্লিয়ার কোন কিছুই তো আজ কাজে আসছে না। আজ সবই যেন অনর্থক!
    আজ এই সামান্য ভাইরাসের কাছে দিশেহারা ও বিপর্যস্ত মানবজাতি। বিপর্যস্ত মানবজাতির দৈনন্দিন কর্মশালা ও আজ লন্ডবন্ড। লন্ডবন্ড আজ পৃথিবীর সব স্বাস্থ্য ব্যবস্হা। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এত বড় ক্ষতির মুখে পৃথিবী আর পড়েনি। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধেও হয়তো এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতো না এ পৃথিবী। আজ কেহই বলতে পারছে না কোন অজানা পথে পৃথিবী হাঁটছে।

    দুই. পাঠক লেখাটি যখন লিখছি বার বার মনে হচ্ছিলো সিরিয়ানদের নির্মম হত্যার ট্রেজেডি, গাজাবাসীদের হত্যার ট্রেজেডি, ইয়ামানবাসীদে হত্যার ট্রেজেডি ও ইরাকীদের হত্যার ট্রেজেডি। পুরো বিশ্ব এ সব হত্যা ও জুলুমের ব্যপারে নিরব ভূমিকা পালন করছে ও পালন করে চলছে। অনেকের হয়তো মনে আছে, সিরিয় একটি ছোট্ট শিশু শহীদ হওয়ার আগে অত্যাচার ও জুলুম সহ্য করতে না পেরে বলেছিল,” আমি আমার ঈশ্বর কে সব কিছু বলে দিব”। আজ এ বিশ্বের দিকে তাকান। ছোট্ট একটি ভাইরাসের জন্য কম্পমান সারা দুনিয়া।

    আজ একমাসের উপরে হয়ে গেছে সারা বিশ্ব লকডাউনে আছে। বিশ্ববাসী হাড়ে হাড়ে এখন টের পাচ্ছে। লকডাউন কী? যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। আজ সহজেই অননুমেয় যখন একাধারে সাতটি মাস সারা কাশ্মীর ছিল লকডাউনে তখন তারা কেমন ছিল? তখন ৮/৯ লক্ষ সেনা বেস্টিত ছিল। ল্যান্ডফোন,মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এ সব বন্ধ ছিল। বাড়ি বাড়িতে ছিল গ্রেপ্তারের হুলিয়া। ছোট বড় সব নেতারা ছিল বন্দী। তাদের খানাপিনা কি ভাবে চলছিল, শুধু সৃষ্টি কর্তাই জানতেন। মহিলা এবং বাচ্চারা দিনে রাতে আতঙ্কিত অবস্থায় বাড়িতে থাকত। কখন কি হয়ে যায়। সেই দিন গোটা দুনিয়া তামাশা দেখছিল। বিশ্ব মানবতা সজাগ ঘুমিয়ে ছিল। পাঠক লেখাটি মোটেই এত লম্বা করার ইচ্ছে ছিল না, তারপরও প্রসঙ্গ ক্রমে অনেক কিছু চলে আসে। এখন প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয়,,,,,, যখন কাশ্মীর ছিল দীর্ঘ সাত মাস লকডাউনে তখন বিশ্ব মিডিয়া ছিল জাগ্রত ঘুমে। জাগ্রত ঘুমের ঘুরে কিছু কিছু মিডিয়ায় যখন কথা উঠছিল তাদের লকডাউন নিয়ে, তার প্রেক্ষিতে ইউরোপিও ইউনিয়নের কয়েকজন সাংবাদিক কাশ্মীর পরিদর্শন করেন। সে সময় পরিদর্শক দলের সাথে থাকার জন্য ভারতের অ্থাৎ তাদের পচন্দমত কয়েকজন সাংবাদিক দিয়েছিল ভারত সরকার। যাতে কাশ্মীর সম্পকীয় সংবাদটি তাদের অনুকূলে থাকে। ওই সময় একজন সাংবাদিক ছিলেন ইকোনমিকস টাইমসের “অরবিন্দু মিশ্র”।
    এই তো সদ্য সাংবাদিক অরবিন্দু মিশ্র নাফিসা উমর নামে কাশ্মীরের একটি মেয়েকে নিয়ে কাশ্মীর অভিজ্ঞতার উপর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন, যে পোস্টটি বিশ্ব জুড়ে ভাইরাল হয়েছিল।
    পোস্টটির অংশ বিশেষ তুলে ধরছি। কাশ্মীরের শ্রীনগরের একটি বাড়ির জানালা থেকে নাফিসা উমর বলছিলেন,” অরবিন্দু ভাইয়া, আপনি দেখে নিবেন, আমার প্রার্থনা খুব শ্রীঘ্রই কবুল হবে। অরবিন্দু বলছিলেন তুমি কি প্রার্থনা করেছ? এবং কেন? ( এখানে বলা বাহুল্য নাফিসা আগেই সাংবাদিক অরবিন্দু কে জানতেন। নাফিসা উমরের ফুফুত ভাই বিলালের বন্ধু সাংবাদিক অরবিন্দু।)
    সাংবাদিক অরবিন্দু বললেন, তখন নাফিসা উমর ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে যা বলছিলেন। আমার কানে অনেক দিনই তা বেঁজেছে। এখন চোঁখের সামনেই তা দেখতেছি। আজ আমরা সবাই যে ঘরে বন্দী, আমার কানে নাফিসার সেই কথাগুলি বার বার বাঁজছে।
    নিম্নে নাফিসার হুবহু তার প্রার্থনাটি তুলে ধরছি,,,,,,
    ইয়া আল্লাহ! যা কিছু আমাদের উপর হচ্ছে, তা যেন অন্য কারোর উপর না হয়। শুধু তুমি এমন একটা কিছু করে দাও, যাতে গোটা পৃথিবী কিছু দিনের জন্য নিজেদের ঘড়ে বন্দী হয়ে থাকতে বাধ্য হয়। সব কিছু যেন বন্ধ হয়ে যায়। তা-হলে হয়তো দুনিয়া অনুভব করতে পারবে যে, আমরা কি ভাবে বেঁচে আছি? কেমন করে বেঁচে আছি? পাঠক আর বেশি লিখব না,,,সবাই অনুভব করুন। বিশ্বের দিকে তাকাই। বিশ্ব মানবতা অনুভব করুক। করোনা হোক বিশ্ব মানবতার এক মহান শিক্ষা।
    লেখকঃ লেখক ও কলামিস্ট