করোনা থেকে চট্টগ্রামবাসীকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান সুজন

    চট্টগ্রাম মেইলঃ চট্টগ্রামবাসীকে করোনার করাল গ্রাস থেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ মঙ্গলবার (১৯ মে ২০২০ইং) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এ আবেদন জানান।

    এ সময় জনাব সুজন বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ইতিমধ্যে আপনার দেওয়া ৩১ দফা নির্দেশনা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে আপনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ, যে যুদ্ধে মানুষের দায়িত্ব হবে ঘরে থাকা। আপনি দেশের একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ দিন-মজুর শ্রেণী, কামার-কুমার, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদারগণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রত্যেকের কথা চিন্তা করেই বিশাল অংকের প্রণোদণার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই আজ পর্যন্ত আপনি সবকিছু নিজ হাতে দক্ষতার সাথে সামলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম আজ করোনা রোগীর চাপে বেসামাল। এই শহরের মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। অথচ এই শহর থেকেই দেশের শতকরা ৮০ ভাগ আয় জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম শহরে দ্রুততার সাথেই করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। করোনা নমুনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত সুবিধা এখানে অপ্রতুল, নেই জীবন রক্ষাকারী আইসিইউ, নেই ভেন্টিলেটর, নেই বলতে কিছুই নেই। মানুষের জীবন আজ মৃত্যুর মুখোমুখি। করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে কোন সিট খালি নেই। তাহলে এর পর চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত কোন রোগী কি আইসিইউ সিটের অভাবে পথে পথে মারা পড়বে? এই শহরের লোক যারা দেশে কিংবা প্রবাসে থেকে দেশের অর্থনীতির সিংহভাগ যোগান দিচ্ছে সেই চট্টগ্রাম আজ করোনা রোগে শিকার হয়ে অসহায়ের মতো মৃত্যুবরণ করছে। চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর জন্য কি কেউ নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামের মানুষকে আজ মৃত্যুর মুখোমুখি ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই শহরে বিশাল সুউচ্চ অট্টালিকা সমমানের বেসরকারি হাসপাতাল আছে কিন্তু মানুষের প্রয়োজনে সেসব হাসপাতালের দরজা বন্ধ, প্রবেশ নিষেধ। চট্টগ্রামের মানুষ যদি চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে মারা যায় তাহলে এতো বড়ো সুরম্য চিকিৎসা স্থাপনাগুলো থেকে কি লাভ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ এই শহরের জন্য কারো কোন মায়া মমতা নেই। এই শহরে এই মূহুর্তে একজন রোগীর আইসিইউ সুবিধার প্রয়োজন হলে সে রোগী নির্ঘাত বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। কোন বেসরকারি হাসপাতালের মালিকের হৃদয় সেই রোগীর জন্য কেঁদে উঠবে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অথচ বছরের পর বছর এই সব বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা রোগের চিকিৎসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কিন্তু জনগনের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির এই চরম দুঃসময়ে তাদের অন্তর পাথরের মতো পাষাণ হয়ে গিয়েছে। এসব বেসরকারি হাসপাতালে অন্তত পক্ষে করোনার নমুনা হলেও পরীক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সরকারী দুইটি হাসপাতাল ছাড়া চট্টগ্রামের বাকী হাসপাতালগুলোও এই মূহুর্তে কার্যত অলস সময় পার করছে অথচ একটুখানি উদ্যোগ নিলেই এই হাসপাতাল গুলোকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা উপযোগী করে তোলা যেতো। দরকার শুধু একটুখানি শুভ উদ্যোগ আর সমন্বয়।

    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ছাড়া এ দেশে কোনটাই হয়না। আপনার কাছে আমাদের করুণ অনুরোধ এ শহরের সাথেই আপনার আবেগ অনুভুতি জড়িত রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত শহর এই চট্টগ্রাম। বঙ্গবন্ধু বীর প্রসবিনী এই চট্টগ্রাম থেকেই আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। যে শহর বাংলাদেশের অর্থনীতির সিংহভাগ যোগান দেয় সে শহরের মানুষ কি আজ শুধু চিকিৎসার অভাবেই মারা যাবে। আপনি নিজেই এ শহরের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার লাল ফিতাকে কেটে টুকরো করে ফেলুন। আপনি নিজেই হস্তক্ষেপ করে এই নগরীর জনগনকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।