হালদায় ডলফিন হত্যা, বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ

     

    হালদা একটি মায়ের নাম।মায়ের সন্তানদের হত্যা করলে প্রকৃতিই হত্যাকারীদের প্রতিশোধ নিবে।চট্টগ্রামের কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে একটি ডলফিন হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের জিয়াবাজার এলাকার ছায়ারচর নামক স্থানে সাড়ে ৫ ফুট লম্বা এবং ৫২ কেজি ওজনের ডলফিনটির ক্ষতবিক্ষত দেহ পরে থাকতে দেখা যায়।

    ডলফিনের কোন অর্গান অথবা চর্বি চুরির চেষ্টা করে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে হালদা নদীর ২৪ টি ডলফিন হত্যা করা হয়েছে যা খুবেই দুঃখজনক ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

    সাম্প্রতিকবছর গুলোতে হালদা নদীর তীরে একের পর এক পরিবেশ দূষণকারী শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে।এসব শিল্প বর্জ্য পতিত হওয়ার ফলে হালদা নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

    মার্চের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রামের হাটহাজারী হতে রাউজান উপজেলা যাওয়ার পথে হালদা নদীর উপর নির্মিত সেতুটি সাইকেলে চড়ে পার হচ্ছিলাম।কিছুক্ষণ সেতুর মধ্যখানে বসে এই নদীর প্রাকৃতিক আশীর্বাদের কথা ভাবছিলাম।পরোক্ষ -প্রত্যক্ষ নানাভাবে আমাদের উপকার করছে এই নদীটি।অথচ আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি।মানুষ এবং প্রকৃতি একে-অপরের পরিপূরক।প্রকৃতি না বাঁচলে মানুষও বাঁচবে না এটা আমরা কেন বুঝতে পারি না?

    হালদা পৃথিবীর একমাত্র সর্পিলাকার জোয়ার -ভাটার নদী যেখানে রুই,কাতলা,মৃগেল, কালিবাউশ, ও কার্প জাতীয় মা মাছ প্রচুর ডিম ছাড়ে।অমাবস্যা ও পূর্নিমার তিথিতে এপ্রিল -জুন পর্যন্ত অনুকূল পরিবেশে প্রচুর ডিম ছাড়ে।

    খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার মোহনা হতে উৎপত্তি হয়েছে।নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৬ কি.মি.গড় ১৩৪ মিটার বা ৬৬ মাইল।২৯ কিলোমিটার অংশ সারাবছর নৌকা চলাচলের উপযোগী থাকে।

    হালদার কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্যই এটি পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র নদী। যা মধ্যে রয়েছে-
    ১.হালদার প্রচুর বাকঁ বা অক্সবো রয়েছে যা ফলে প্রচন্ড ঘূর্ণনের ফলে গভীর নদীতে কুয়া বা কুম হয়।
    ২.প্রচুর বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়।
    ৩.নদীর পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়।
    ৪.পানি অত্যন্ত ঘোলা হয়।
    ৫.জোয়ার -ভাটার শেষে পানি অত্যন্ত স্হির থাকে ফলে তখন মাতৃ মাছ ডিম ছাড়ে।

    প্রকৃতি আমাদের উপকার করছে। তাই আমাদেরও দায়িত্ব প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা।এই পৃথিবীর জীব-জন্তু,পশুপাখি, কীটপতঙ্গসহ সকলের বসবাস করার অধিকার রয়েছে। তাই সবাই সচেতন হই,নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বসবাস উপযোগী পৃথিবী উপহার দেওয়ার জন্য বিনা প্রয়োজনে সকল পশুহত্যাকে না করি।

    সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী
    উন্নয়নকর্মী