এহসান এস কেলেঙ্কারির হোতা ছলিম উল্লাহ নাজিরহাট মাদ্রাসা মোহতামিম !

    বাংলাদেশ মেইল :: 

    শুরা বৈঠকের জাল কাগজ তৈরি করে নিজের লোকজন থেকে ফুলের মালা নিয়ে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা মোহতামিমের পদে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাওলানা ছলিম উল্লাহ’র বিরোদ্ধে। এ বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে ফটিকছড়িতে।

    জানা যায়, নাজিরহাট মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার মোহতামিম আল্লামা শাহ মোহাম্মদ ইদ্রিসের মৃত্যু পর থেকে একটি চক্র ইতিপূর্বে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত ছলিম উল্লাহকেই  মাদ্রাসার মোহতামিম (পরিচালক) হিসেবে নিয়োগ দিতে উঠে পড়ে লাগেন। যদিও এহসান এস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারন গ্রাহকের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে মাওলানা ছলিম উল্লাহ’র বিরোদ্ধে।

    হাটহাজারী মাদ্রাসায় একটি শুরা বৈঠকে  নতুন পরিচালক হিসেবে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ছলিম উল্লাহকে নিয়োগে দেয়া হয়েছে  এমন দাবি করে মোহতামিমের পদ দখল করে নিয়েছেন মাওলানা ছলিম উল্লাহ  ।

    মাওলানা ছলিম উল্লাহর এমন দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আজ  বৃহস্পতিবার  (১৮জুন) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ফটিকছড়িবাসী।

    গেল শনিবার মাওলানা ছলিম উল্লাহকে নিয়োগ দেয়ার বিরোধিতা করে সমাবেশ করেন স্থানীয়রা।  নাজিরহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে স্থানীয়রা হাটহাজারীর মোহতামিম আল্লাম শফির ছেলে  মাওলানা আনাস মাদানীকে দায়ী করে শ্লোগান দেয়।

    নাজিরহাট মাদ্রাসার শূরা বৈঠক হবে হাটহাজারী মাদ্রাসায় এমন খবরেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হলে শুরা বৈঠকটব স্থগিত করা হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার করা হয়। এর দুদিন পরে  শুরা সদস্যদের স্বাক্ষর করা একটি জাল কাগজ প্রদর্শন করে মাদ্রাসার মোহতামিম হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের চেষ্টা করে৷ নিজের লোকজন দিয়ে ফুলেল সংবর্ধনা মাওলানা ছলিম উল্লাহ।

    পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকজন শুরা সদস্য দাবি করেন তারা কোন বৈঠকে অংশগ্রহন করেন নি৷ এবং তাদের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে।

    দুই শুরা সদস্য মাওলানা মুফতি জসিম উদ্দিন ও মাওলানা দিদার কাসেমীও দাবি করেন তারা কোন শুরা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেননি। তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

    জানতে চাইলে,  হাটহাজারী মাদ্রাসার নবনিযুক্ত নায়েবে মোহতামিম মাওলানা শেখ আহমদ জানান,  ‘নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার কোন শুরা বৈঠক হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়নি। এবং নাজিরহাট মাদ্রাসায় নতুন মোহতামিম নিয়োগের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তও হয়নি৷ কেউ আমার স্বাক্ষর জাল করে থাকতে পারে। ‘

    উল্লেখ্য, এহসান এস সোসাইটি নামক সমবায় প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এলাকাবাসী ও অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের চলমান প্রতিবাদের মুখে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ছলিম উল্লাহকে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক পদ থেকে ৬ মাসের জন্য অব্যাহতি দিয়েছিল শূরা কমিটি । মাওলানা ছলিম উল্লাহ এহসান এস সোসাইটির নাজিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রালগ্ন থেকেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক মাঠে আন্দোলনে নামে।

    স্থানীয় সূত্র ও গ্রাহকদের অভিযোগ, মাওলানা ছলিম উল্লাহ ২০০৭ সালে এহসান সোসাইটি চালু করেন। এহসান সোসাইটিকে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ও সুদমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুদ না খেয়ে তার প্রতিষ্ঠানে ডিপিএস খোলার জন্য স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করা হয়। তিনি যেহেতু নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও আলেম, তার কথায় বিশ্বাস করে স্থানীয়রা হিসাব খুলতে শুরু করেন। গ্রাহকদের বলা হয়, তাদের জমানো টাকা ছয় বছরে দ্বিগুণ বা ইসলামী শরিয়া মোতাবেক কমবেশি হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ডিপিএসের মেয়াদপূর্তি দুই বছর বাড়িয়ে আট বছর করা হয় এবং শর্ত দেওয়া হয়, মেয়াদপূর্তির আগে কোনো লভ্যাংশ গ্রাহককে দেওয়া হবে না। এভাবে অন্তত আট বছর অর্থ লেনদেন করার পর গ্রাহকদের ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার শেষ মুহূর্তে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেন।

    অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকেই নাজিরহাট মাদ্রাসার নতুন মুহতামিম হিসেবে কেন নিয়োগ দেয়া হবে এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের মুখে মুখে  ।

    জানা যায়, নাজিরহাট মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম (সহকারী পরিচালক) মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ কিন্তু তাকে সরিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ছলিম উল্লাহকে মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন খবর এলাকায় প্রচার করছে একটি পক্ষ।

    এ বিষয়ে জানতে মাওলানা আনাস মাদানীর সাথে সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে ফোন কেটে দেন। পরে তিনি আর কল রিসিভ করেন নি।