সংলগ্ন হই-মানবতা ও সত্য এবং ভালোবাসার বন্ধনে

    ড. আনোয়ারা আলম ::

    যুগে যুগে এসেছে মহামারী নানা রূপে -মৃত্যুবরণ করেছে কোটি কোটি মানুষ। ধ্বংস হয়েছে জনপদ।কিন্তু একুশ শতকে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এমন অভাবনীয় উন্নতিও হার মেনেছে প্রকৃতির কাছে।কি এক অদৃশ্য শত্রু! যার অন্যতম প্রতিষেধক মাস্ক এবং মাস্ক। তাহলে মানুষের নিঃশ্বাসে – প্রশ্বাসে বিষ! চোখের দৃষ্টিতেও!!!

    সভ্যতার যতো অগ্রগতি হয়েছে আমরাও পরিণত হচ্ছিলাম মুখোশধারীতে। বাইরে ও ভেতরে-কথা ও কাজে – আচরণ ও বচনে কতো অমিল।

    পারস্পরিক বিশ্বাস – আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বে ও এক প্রকার সুক্ষ আবরণ।একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস, পরশ্রীকাতরতা,,হিংসা -একই সাথে খ্যাতির মোহ!
    পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনেও ক্রমশঃ নিস্পৃহতা বা শীতলতা। ক্রমাগত বিচ্ছিন্নতার দিকে আমরা। বৃদ্ধ মা ও বাবা, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীর প্রতিও উদাসীনতা। ব্যস্ত শুধু নিজেকে নিয়ে।করোনা নামক ভয়ংকর ভাইরাস এ ব্যবধানকে চিরস্থায়ী করে দিল। এমন কি প্রিয়জনের চিরবিদায়ে ও আমরা এক হয়ে পরস্পরের সংলগ্ন হয়ে শোককে হালকা করতে পারছিনা।এযে কি গভীর বেদনার তা একমাত্র ভুক্তভোগীরা উপলব্ধি করতে পারবেন।
    সামাজিক দুরত্ব বা নিরাপদ দুরত্ব! আরও একটি প্রতিষেধক। সম্পর্কেতো দুরত্ব হচ্ছিল। একই ছাদের নীচে থেকেও মানসিক দুরত্ব! একসাথে খাবারের টেবিলে ও কি বসা হতো!আর এখন! একদিকে সামাজিক অন্য দিকে একই ছাদের নীচে বন্দী।
    বিজ্ঞান শক্তির অপব্যবহার ও আমরা করেছি স্পর্ধা ও ঔদ্ধত্যের ক্রীতদাস হয়ে এর কল্যাণ শক্তিকে ক্ষমতা বিস্তারের প্রতিযোগিতায়। তাইতো মানুষে মানুষে ও মানুষে প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যবধান। ক্ষিপ্ত প্রকৃতির বিষাক্ত ছোবলে পুরো বিশ্ব এখন চরম সংকটে।প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে কতো প্রিয়জন! পৃথিবী থেকে অকালে ঝরে পড়ছে কতো নক্ষত্র!! প্রিয়জন হারানোর বেদনায় মানসিক ভাবে চরম অবসাদে প্রতিদিন কাটছে গভীর বেদনায়।

    আমরা কখন ফিরে পাবো এক আলোময় পৃথিবী! কখন আসবে মুক্তি। আবারও আমরা সব বিভেদ ভুলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারবো!  আর নয় বিভেদ,আর নয় হিংসা, আর নয় স্বার্থপরতা বা খ্যাতির মোহ।এসো আমরা সংলগ্ন হই–মানবতা ও সত্য এবং ভালোবাসার বন্ধনে।ছিঁড়ে ফেলি মুখোশ! এসো-ভেতরে ও বাইরে একাত্ম হই।

    লেখক ::

    ড. আনোয়ারা আলম, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ