একজন সাদেকা সামাদ ও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম

    বাংলাদেশ মেইল ::

    বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে  সাদেকা সামাদ একটি অনন্য নাম । একদিকে তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ,অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট এবং একাত্তরের আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী ।

    দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন তিনি।  অন্যদিকে দিকে একজন বীর শহীদের গর্বিত  মাতা তিনি । স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয় । তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার চার ছেলেকে ডেকে বলেছিলেন “আমার ছেলেদের আমি বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে উৎসর্গ করতে চাই “-এমনি দেশ প্রেমী ছিলেন সাদেক সামাদ।

    ২৬ মার্চ তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস। দেশপ্রেমিক এই শিক্ষাবিদের জন্ম ও মৃত্যুর সাথে  স্বাধীনতা দিবসের যেন অদ্ভুত মিতালি।

    সাদেকা সামাদের জন্ম ফরিদপুরের এক মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ খান ছিলেন তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। কর্মসূত্রে তিনি বিহারের রাজধানী পাটনায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সাদেকা সামাদের জন্ম হয়। সেখানেই তিনি তাঁর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজে। লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ (এলবিসি) কলকাতা শহরে অবস্থিত ভারতের শীর্ষস্থানীয় নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য। এই কলেজ প্রাক-স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত উপাধি প্রদান করে। সেখানে থেকে স্নাতক ডিগ্রী গ্রহণ করেন সাদেকা সামাদ।  অতঃপর দেশ ভাগের পর তারা তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের ফরিদপুরে চলে আসেন।

    তাঁর কর্ম জীবন শুরু করেন মাদারী পুরে “ডোনাভান গার্লর্স হাই স্কুলে”র প্রধান শিক্ষয়ত্রী হিসাবে। তারপর তিনি নারাণগঞ্জে অবস্থিত “মরগ্যান” স্কুলে প্রধান শিক্ষয়িত্রীর পদ গ্রহণ করেন। অবশেষে তিনি ঢাকাস্থ আদন্দময়ী গার্লস হয় স্কুলে প্রধান শিক্ষয়িত্রীর পদে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষা দেন করেন। সেখানে প্রধান শিক্ষয়িত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ,এ ও এম,এড ডিগ্রী লাভ করেন। “ফুল ব্রাইট” স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যান এবং সেখান থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৪ সালে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে এই “ফুল ব্রাইট” স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যান তখন একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাহানারা ইমাম তাঁর সহপাঠী ছিলেন। এছাড়াও ওনারা কেবল বন্ধুই ছিলেন না , জাহানারা ইমামের সাথে তাঁর জীবনের অনেক মিল। সাদেক সামাদের বড় ছেলে আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আগরতলায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ২নং সেক্টরের সালদানদী সাব-সেক্টরের অধীনে কয়েকটি রেইড ও অ্যাম্বুশে অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১সালে তিনি সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের অফিসার নির্বাচিত হন।ভুরুঙ্গমারীতে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ সমরে বীর উত্তম লেঃ আশফাকুস সামাদ শহীদ হন। তিনি ছিলেন জাহানারা ইমামের জেষ্ঠ্য পুত্র রুমির পরম বন্ধু এবং আগরতলার মেলাঘরে সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশারফের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। রুমিও শহীদ হন পাক সেনাদের হাতে। সাদেক সামাদ ও জাহানারা ইমাম দুজনেই শহীদ মাতা।
    সাদেক সামাদ বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭০ সালে তিনি তদানীন্তন সর্ব পাকিস্তানের “বেস্ট হেড মিস্ট্রেস ” ও “তামগায়ে কায়েদে আজম “পদক পান। পরে স্বাধীনতার গণ আন্দোলনের সময় তিঁনি “তামগায়ে কায়েদে আজম “পদক প্রত্যাখ্যান করেন।
    সাদেকা সামাদের বহুমাত্রিক গুনের বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।  যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে তিঁনি তার সন্তানকে উৎসর্গ করেছিলেন সেই চেতনা সমুজ্জ্বল  হোক।