নেপথ্য নায়ক লিয়াকত আলী!
    কি হচ্ছে বাঁশখালীর বিদ্যুৎ প্রকল্পে, শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে কে?

    সাইফুল আলম, বাংলাদেশ মেইল ::

    বাঁশখালী গন্ডামারা আবারো স্থানীয়দের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। গন্ডামারা ইউনিয়নের স্থানীয় চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী প্রত্যক্ষ  ইন্দনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকরা।

    স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে তিনটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন প্রকল্পে শ্রমিক সরবরাহের কাজ করে আসছে। এর মধ্যে একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী।

    শুক্রবার দশ দাবিতে আন্দোলন শুরু করে প্রকল্পে কর্মরত স্থানীয় শ্রমিকরা। রাতে তাদের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হয়। শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে প্রকল্প এলাকায় আবারো বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। এসময় তারা নামাজ ও ইফতারের জন্য দুই ঘন্টা বিরতি চেয়ে শ্লোগান দেন।

    এ সময় পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় আরো ২৫ শ্রমিক। অনুসন্ধানে জানা যায় বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর ছত্রছায়ায় সংগঠিত হতে থাকে তার অধিনে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা।

    ২০১৬ সালে ৪ এপ্রিল  বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনকে কেন্দ্র করে গন্ডামারার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে ত্রিমুখী  সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এই  ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব   দিয়েছিল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী।

    প্রকল্পের শুরুর দিকে ২০১৬ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী ‘বসতভিটা ও গোরস্থান রক্ষা’ কমিটির আহ্বায়ক গন্ডামারা ইউনিয়নের  চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল মোস্তফা সংগ্রামের লোকজনের মধ্যে  সংঘর্ষে মারা যান ৪ জন ।

    একই বছরের ১৬ মে লিয়াকতের বিরুদ্ধের অস্ত্র আইনে মামলাও হয়। এর পর বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী গণ্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, অস্ত্র আইন, নাশকতা, চেক জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে ২৪টি মামলা রয়েছে। তবে সবগুলো মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি ।

    সুত্র বলছে (১৭ এপ্রিল) শনিবারের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী৷ ২০১৬ সালের সংঘর্ষের পর থেকে লিয়াকত আলী এস আলম গ্রুপের আস্তাভাজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে৷ প্রকল্পের শ্রমিকসহ বিভিন্ন সরবরাহের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কিন্তু মাঝখানে অন্য দুটি পক্ষ শ্রমিক সরবরাহে জড়িত হয় এ প্রকল্পে। সুত্র বলছে নিজের সক্ষমতা প্রমান করতে নতুন করে শ্রমিকদের মাঠে নামিয়েছেন তিনি।

    স্থানীয় শ্রমিকরা শনিবারের ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি অন্য একটি পক্ষ সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে গুলি করেছে এমন অভিযোগও করেছেন। বিএনপির একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে এ সংঘর্ষ চলমান রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ। এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ ও আন্দোলন সৃস্টি করে দলের কাছে নিজের সক্ষমতার পরিচয় দিতে চেয়েছেন।

    এ বিষয়ে জানতে লিয়াকত আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অন্য একজন তার ফোন রিসিভ করে জানায় তিনি ব্যস্ত আছেন। পরে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায় নি।

    বেসরকারি খাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি উন্নয়নকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এটি বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
    প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেশে বেসরকারি খাতের বিশেষ সামর্থ্যের প্রমাণ রাখার কথা থাকলেও শুরু থেকেই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে বিরোধে জড়ায় এস আলম গ্রুপ।

    এই প্রকল্পের জন্য ৬০০ একর জমি কেনা হয়।
    এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা  এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের অপর প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশের মালিক । চুক্তিতে ৪৫ মাসের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও পাঁঁচ বছরে শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ।

    ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৬০ পয়সার মতো।