চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার আশংকা
    চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে একযোগে ১১৪ চিকিৎসকের বদলি

    বাংলাদেশ মেইল ::

    চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে একযোগে ১১৪ চিকিৎসকের বদলির মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের  নজিরবিহীন ক্ষমতার ঝলকানি দেখলো চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা। কোন ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই করোনাকালে একসাথে এক সংখ্যক চিকিৎসকের বদলির কারনে চট্টগ্রামের  চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বদলির কারন হিসেবে করোনা অতিমারি মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও চট্টগ্রামের  নন কোভিট রোগীরা নিশ্চিতভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত হবেন।

    সোমবার (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে একসঙ্গে অন্তত ১১৪ জন চিকিৎসককে বদলির নির্দেশনা জারি করা হয়ে। সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া এক প্রজ্ঞাপনে চমেকসহ সারা দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের বদলির নির্দেশনা জারি করা হয়।
    বদলির নির্দেশনা–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত স্বাস্থ্য বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করা হলো।’ উপসচিব জাকিয়া পারভিন এই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।

    বুধবারের মধ্যে তাঁদের পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। লকডাউনের মধ্যে কিভাবে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন চিকিৎসকরা -সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

    কোভিডের পাশাপাশি চমেক হাসপাতালের নন–কোভিড বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা বদলির আদেশ পেয়েছেন। জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমার ১১৪ জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। আমি এটা জেনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে এসএমএস দিয়েছি। জানিয়েছি এতে আমার চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। কারণ, কোভিডের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগ জড়িত। এ ছাড়া আমার হাসপাতালে নন–কোভিড দুই হাজারের বেশি রোগী থাকছে। কোভিড ও নন–কোভিড দুটিই ব্যাহত হবে।’

    সন্ধ্যার আদেশটি নিয়ে রাতেই চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। চমেক হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডির পাশাপাশি খাগড়াছড়ি, ফেনী এবং আশপাশের জেলার জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বদলি আদেশ দেওয়া হয়েছে। বদলির উদ্দেশ্যে এবং লকডাউনের মধ্যে তাঁরা বুধবারের মধ্যে পদায়নকৃত কর্মস্থলে কীভাবে যোগদান করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

    তবে বদলি বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের এখন ক্লাস নেই, তাঁদের বদলি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

    এ বিষয়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিভাগীয় সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ও নন– কোভিড সারা বিভাগের রোগী আছে। এখানে কোভিড রোগী এখন প্রায় ২৫০। নন–কোভিড রোগী দুই হাজার। এখান থেকে হঠাৎ করে চিকিৎসক বদলি করা বিদ্যমান চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি বিদ্যমান ডাক্তার দিয়েই ভালোভাবে চলছে। চমেক থেকে ডাক্তার নিয়ে গেলে হাসপাতালটির কোভিড ও নন–কোভিড দুই শ্রেণির রোগিরই চিকিৎসা ব্যাহত হবে।

    চমেক হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এটি একযোগে বদলি হওয়া সর্বোচ্চ সংখ্যা৷ কোন যৌক্তিক কারন ছাড়া এমন বদলির কারনে করোনা ইউনিট ছাড়া অন্যান্য বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হবেন৷

    হঠাৎ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকরা। গণবদলির কারনে গাইনি, সার্জারী,হৃদরোগ,নিউরো মেডিসিন বিভাগে স্পষ্ট সংকটের সৃষ্টি হলো।