জহির রায়হানের ৮৭ তম জন্মদিন

    জহির রায়হান

    বাংলাদেশ মেইল::

    জহির রায়হান বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ ।চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক এই তিন পরিচয়েই তিনি সফল ছিলেন।  পুরো নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাক নাম ছিল জাফর। মানুষের কাছে জহির রায়হান নামেই বিখ্যাত।

    কিংবদন্তির আজ ৮৭ তম জন্মদিন । ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট  ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রতিভাবান।  কিন্তু তার মৃত্যুর দিনটি অজ্ঞাতই রয়ে গেছে আজো। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুর ঢাকায় তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয় মিরপুরে বিহারী এলাকায় ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলির আঘাতে তিনি মারা যান।

    জহির রায়হান নামটি আসলে রাজনীতির সূত্রে পাওয়া। ১৯৫৩ বা ৫৪ সালের দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। এ সময়ে মনি সিংহের দেওয়া রাজনৈতিক নাম ‘রায়হান’ গ্রহণ করে তিনি হয়ে যান জহির রায়হান ।তার বাবার নাম মোহাম্মদ এমদাদউল্লাহ এবং মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। বাবা ছিলেন একজন আইন ব্যবসায়ী।

    রাজনৈতিক নানা অস্থিরতা তাকে নাড়া দিতো । ১৯৪৫ সালে ভিয়েতনাম দিবস এর মিছিলে জহির রায়হান অংশ নেন। ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক কারণে একাধিকবার জেলে গিয়েছেন তিনি। প্রথমে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়ে জেলে যান। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে মিছিল করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

    বাংলা চলচ্চিত্রে খুব অল্প কিছু মেধাবী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যারা এখনও আমাদের মাঝে মরে গিয়েও বেঁচে আছেন, আর তেমনই একজন জহির রায়হান। তার চলচ্চিত্রগুলো এখনো বিশাল একটা জায়গাজুড়ে আছে বাঙালির মনে । আর তার কিছু লেখাতো অমর হয়ে আছে । তার একটি কালজয়ী উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’ । পরে এই উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়ন করেন তারই সহধর্মিনী অভিনেত্রী কোহিনূর আকতার সুচন্দা ।তার প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী সুমিতা দেবী। এই প্রয়াত অভিনেত্রীর দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দুজনেই নাট্য নির্মাতা। স্ত্রী সুচন্দার ছেলে তপু রায়হানও অভিনেতা।

    বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগত ও জীবনমুখী সাহিত্য ধারায় জহির রায়হানের অবদান অনেক । তার খ্যাতি চলচ্চিত্রের জন্য হলেও শুরুটা কথা সাহিত্যিক হিসেবে। তিনি অবশ্য অনেক কাজের সঙ্গেই জড়িত ছিলেন।

    তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ১৯৫৭ সালে। নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। এ ছাড়াও ‘বাহানা’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ তা নির্মিত কয়েকটি আলোচিত চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ আজো ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ।

    তার  সাংবাদিক জীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে।‘যুগের আলো’ পত্রিকায়। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে ‘প্রবাহ’ নামের একটি পত্রিকায় যোগ দেন।

    তার প্রথম গল্প ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে।  ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি তার অন্যতম ও জনপ্রিয় উপন্যাস। এছাড়াও রয়েছে- শেষ বিকেলের মেয়ে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কতদিন, তৃষ্ণা ইত্যাদি।তিনি তার সাহিত্য জীবনে অনেক পুরস্কার পান। জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাস ১৯৬৪ সালে ‘আদমজী পুরস্কার’ পায়। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা উপন্যাসে অবদানের জন্য তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (মরণোত্তর) দেওয়া হয়।