করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি চট্টগ্রামে নেই

    ভ্যারিয়েন্টের

    বাংলাদেশ মেইল::

    নতুনভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম করোনাভাইরাসের এমন নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলে নেই। তবে বিভিন্ন জিনের বায়োলজিক্যাল মডেলিং দ্বারা করোনার মিউটেশন সম্পর্কে আরও গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। এমন তথ্য উপস্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক।বুধবার সিভাসু থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

    বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে একদল গবেষক করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জিন সিকোয়েন্সের মিউটেশন নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন। এ গবেষণায় সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন সময়ের ৩০০টি নমুনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সিভাসু উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, এ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, নমুনার স্পাইক প্রোটিনের জিন সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মিউটেশন এবং উচ্চ সংক্রমণ করতে সক্ষম, করোনাভাইরাসের এমন সম্ভাব্য নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্তকরণ।

    চীনের উহানে সর্বপ্রথম নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটি বেশ কয়েকবার রূপ পরিবর্তন করেছে। ফলস্বরূপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়-বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলেও করোনাভাইরাসের তিনটি উল্লেখযোগ্য ভ্যারিয়েন্টের (আলফা, বিটা, ডেল্টা)- কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে করোনার ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে এসব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ও মৃত্যুহারে ভিন্নতা দেখা যায়। এমনকি নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতিরও সম্ভাবনা থাকে।

    সিভাসু কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবের গবেষকগণ জুন ২০২০ হতে জুলাই ২০২১ সাল পর্যন্ত উক্ত ল্যাবে পরীক্ষাকৃত নমুনাসমূহের মধ্যে ৩০০টি কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনার স্পাইক প্রোটিনের সিকোয়েন্সিং এবং এদের মিউটেশন বিশ্লেষণ করেন।

    গবেষণায় দেখা যায়, ৬৭টি নমুনার স্পাইক প্রোটিনের মধ্যে মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে নিউক্লিওটাইডের সিঙ্গেল মিউটেশন হয়েছে ৪৩টি নমুনায়। একের অধিক নিউক্লিওটাইডের মিউটেশন হয়েছে ২৪ টি নমুনায়। এসব মিউটেশনের কারনে স্পাইক প্রোটিনের ৪৯টি বিভিন্ন স্থানে এমাইনো অ্যাসিডের পরিবর্তন হয়েছে।

    বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদ্বারা স্পাইক প্রোটিনের গঠনের উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। এসব মিউটেশনের স্থান ছিলো স্পাইক প্রোটিনের S1 ডোমেইন এবং S1-S2 সাব-ইউনিট লিংকার। এমাইনো অ্যাসিডসমূহের মিউটেশনের উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, D614G, D138H, V213L এবং Q506H।

    এসব বিশ্লেষণের আলোকে গবেষকরা দাবি করেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুনভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম এমন কোনো করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি নেই। তবে তাদের ধারণা, বিভিন্ন জিনের বায়োলজিক্যাল মডেলিং দ্বারা করোনাভাইরাসের মিউটেশন সম্পর্কে আরও গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে।

    সিভাসু জানিয়েছে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ও মানবদেহের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের (ACE-2) সংযোগস্থলসমূহ শনাক্তকরণের মাধ্যমে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ডিজাইন করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ভাইরাসের প্রোটিনের নির্দিষ্ট এপিটোপ (ভাইরাসের সংরক্ষিত অংশ-যা মানব শরীরে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডির সঙ্গে ক্রিয়া করে) শনাক্তকরণের মাধ্যমে অধিক কার্যকরী টিকা উদ্ভাবনে সহায়তা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। উপরন্তু, মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ক্রমাগত পরিবর্তন টিকা এবং অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের কার্যকারিতায় ও বৈচিত্র্য নিয়ে আসে।

    তাই সিভাসুর গবেষকরা মনে করেন, নিয়মিত স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন বিশ্লেষণ করে অধিক কার্যকরী টিকা এবং অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ উৎপাদন করা সম্ভব, যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

    গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. ত্রিদীপ দাশ, মলিকুলার বায়োলজিস্ট ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ডা. তানভীর আহমদ নিজামী।

    গবেষকদলের সদস্য ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেহেতু এসব নমুনার মিউটিশনের ক্ষেত্রে কোনো বলার মত পরিবর্তন পাওয়া যায়নি। সেহেতু এটা নিশ্চিত যে চট্টগ্রামে নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি নেই। কারণ নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভবই হয় আগের ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের মাধ্যমে।

    তিনি বলেন, মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ক্রমাগত পরিবর্তন ভ্যাকসিন এবং এন্টিভাইরাল ড্রাগের কার্যকারিতায় ও বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। গবেষণায় স্পাইক প্রোটিনের যা সামান্য মিউটেশন আমরা পেয়েছি এ ধরনের মিউটেশন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতায় কোন প্রভাব ফেলবে না।

     

    facebook sharing button
    twitter sharing button
    messenger sharing button
    sharethis sharing button