নিষেধাজ্ঞা শেষ, আজ থেকে আবারও ইলিশ ধরা শুরু

বাংলাদেশ মেইল ::

ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার মধ্যরাত থেকে সাগর ও নদ-নদীতে আবারও ইলিশ ধরা  শুরু করবে জেলেরা। এরই মধ্যেই জেলেদের মাঝে শুরু হয়ে গেছে ট্রলার ও জাল নিয়ে সাগরযাত্রার প্রস্তুতি। পাইকার ও আড়তদারদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মৎস্য ঘাটগুলো।

ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ( ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত সারাদেশে ২২ দিনের জন্য বন্ধ ছিল সাগর ও নদ-নদী। নিষিদ্ধ ছিল ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময়। অবশেষে দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর সাগর নদীতে প্রান ফিরে পাবে জেলেরা। এখন সাগর ও নদীর বুকজুড়ে ঘটবে জেলেদের মিলন মেলা । আবারও সরগরম হয়ে উঠবে দেশের অসংখ্য জেলে পল্লী, মাছ বাজার, মৎস্য ঘাট।

চট্টগ্রামের ইলিশপাড়া নামে পরিচিত বাঁশখালীর উপকূলীয় জেলে পাড়া এবং মৎস্য ঘাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়ার জন্য যেন তর সইছেনা জেলেদের। তারা ফিশিং বোট, ইঞ্জিন এবং জাল সারাইয়ের কাজ করছেন পুরোদমে। বিরতিহীন ভাবে চলছে তাদের এই কাজগুলো। অনেকে আবার সাগরে ফেরার খুশিতে কাজের ফাঁকে একে-অপরের সাথে করছেন ট্টাট্টা মশকরা। আবার কিছু জেলে মাছ শিকারের জন্য সাগরে ৭/৮ দিন অবস্থান করবেন বলে পরিবারের জন্য চাল, ডালসহ মুদি মালামাল কেনার জন্য ভিড় জমিয়েছেন আশে-পাশের দোকান গুলোতে।

বাঁশখালীর সরকার বাজার ঘাট থেকে সাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে জেলে জমির উদ্দীন। তার কাছে যাওয়াতে তিনি বলেন, তার ফিশিং বোটে এ ঘাট থেকে সব সময় তিনিসহ মোট ২০ জন বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যান। গত ২২ দিন সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা এতদিন বেকার ছিলেন। ধার-দেনা করে অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছেন। এখন মাছ শিকার করে সেই ধার-দেনা পরিশোধ করে বাচ্চাদের জন্য নতুন কাপড় এবং বড় মেয়ের জন্য এক জোড়া কানের দুল কিনবেন বলে জানান তিনি।

জালিয়াঘাটার ফরিদ মাঝি বলেন, ৩০ বছর ধরে সাগরেই মাছ ধরে জীবন কাটিয়েছি। গত ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার জন্য মাছ ধরতে না পেরে মনে কষ্ট অনেক পেয়েছি। ২২দিন পর আগামীকাল রাতে আল্লাহর নাম নিয়ে সাগরে বের হব। আল্লাহ যদি দেয় তবে ট্রলার পুরা ইলিশ লইয়া ঘাটে ফিরব।

বোট মালিক সমিতির নেতারা জানান, ২২দিন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় মৎস্য ঘাট ও জেলে পল্লিগুলো নীরব ছিল। বন্ধ ছিল উপকূলীয় মৎস্য আহরণ কেন্দ্রগুলো। কয়েক হাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিক দীর্ঘ সময় বেকার ছিলেন। এ সময় তালিকাভুক্ত জেলেরা খাদ্যসহায়তা পেয়েছেন। তবে তালিকার বাইরের কয়েক হাজার জেলে সরকারি কোনো সহযোগিতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছেন।

বাঁশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উম্মুল ফারা বেগম তাজকিরা জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণে ( ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত সারাদেশে ২২ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই সময়ে ইলিশের আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ ছিল। যাতে মা মাছেরা ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। এই সময়টাতে আমি নিজে বাঁশখালীর মৎস্য ঘাট ও বিভিন্ন বাজার তদারকি করেছি।

এই ২২দিন সাগর-নদী বন্ধ থাকায় কর্মহীন জেলেদের পাশে থাকতে সরকার জেলেদের মধ্যে ডিজিএফের চাল বিতরণ করবে। এতে বাঁশখালীতে তালিকা ভুক্ত ৬ হাজার ১শত ৪২ জন জেলে পরিবার এই সরকারী সহায়তা পাবেন বলে জানান তিনি।