নিজের সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্ঠা: স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

বাংলাদেশ মেইল ::

স্ত্রীকে ঘরে তালাবন্দী করে রেখে নিজের দুই মাস বয়েসী শিশু সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন নুরজাহান আক্তার কলি নামের এক এতিম অসহায় নারী। সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার পাশাপাশি স্ত্রীকে এর আগেও সন্তানসহ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে গায়ে গরম ভাতের মাড় ফেলে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে স্বামীর বিরুদ্ধে।

সোমবার (১১.১০.২১) দুপুরে চট্টগ্রামের মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে এই মামলা দয়ের করেন নুরজাহান আক্তার কলি (২০) নামে পিতৃ-মাতৃহীন এতিম এই নারী।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন এবং খুলশী থানাকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, যৌতুকের জন্য অনেক ধরনের নির্যৃাতনের কথা আগে শুনেছি। কিন্তু স্ত্রীকে ঘরে বন্দী করে ২ মাসের শিশু সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টার খবর আগে কখনো শুনিনি। পাষন্ড এই স্বামী দীর্ঘৃদিন ধরে বেকার থাকায় স্ত্রীর উপর যৌতুকের দাবিতে মারধোর করতো। আর তাতে সায় দিয়ে স্ত্রীর উপর নির্যাতনে সহায়তা করতো শশুর বাড়ির লোকজন। আদালত মামলাটি আমলে নেয়ায় আশা করছি নির্যাতিতা এই মহিলা ন্যায় বিচার পাবেন।

মামলায় নির্যাতিতা ওই মহিলার শশুর, শাশুড়ি, দেবব এবং এক খালা শাশুড়িকেও আসামী করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, এতিম এই নারী নুরজাহান আক্তার কলিকে আশপাশের লোকজন ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে বিয়ে দেন আরাফাতুল ইসলাম মোর্শেদ নামের লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকার এক ছেলের সাথে। বিয়ের পর থেকেই কলিকেত যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকে স্বামীসহ শশুরবাড়ির লোকজন। গর্ভে সন্তান আসলে স্বামী একদিন যৌতুকের দাবিতে সন্তান নষ্ঠ করে ফেলার উদ্যোগ নেন। স্ত্রী রাজী না হওয়ায় তার উপর নির্যাতন নেমে আসে। ৯৯৯ এ ফোন করে সে যাত্রায় বেচে যান ওই নারীসহ তাদের গর্ভের সন্তান। সামাজিকভাবে বিচারে স্ত্রীর উপর আর নির্যাতন হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে বেকার স্বামী মোর্শেদ প্রায়ই স্ত্রীকে মারধোর করতে। পিতা-মাতা না থাকায় সন্তান আর নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কখনো উচ্চবাচ্য করতো না স্ত্রী কলি।

অবশেষে বিগত ১০ জুলাই গর্ভের সন্তান ইয়াসিন পৃথিবীর আলো দেখলে কলির উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বাড়িভাড়ার টাকাসহ যৌতুক দিতে না পারলে মেরে ফেলার হুমকির মধ্যেই চলতে থাকে কলির যন্ত্রনার জীবন। একদিন কলিকে মারধোর করে শিশু সন্তানসহ ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় শাশুড়িসহ স্বামী মোর্শেদ। শুধু তাই নয়, গরম ভাতের মাড় ঢেলে দেয় মাটিতে পড়ে থাকা কলির গায়ে এবং পায়ে।

সন্তানের বয়স যখন দুই মাস ছুই ছুই করছে এমন এক সময়ে গত ৫ অক্টোবর স্বামী এবং শশুর বাড়ির লোকজন আবারো মারধোর করে কলির উপর। এবার স্ত্রী কলিকে যৌতুকের জন্য শুধু মারধোর নয়, কথাকাটাকাটির জের ধরে ঘরের ভিতর তালাবদ্ধ করে রেখে প্রায় ২ মাস বয়েসী শিশুটিকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে স্বামী মোর্শেদ। স্ত্রীর কলির চিৎকারে আশপাশের লোকজনসহ কলির দুর সম্পর্কের আত্মীয় স্বজন এসে ৯৯৯ এ ফোন করলে পালিয়ে যায় স্বামী মোর্শেদ। আহত কলিকে সেখান থেকে কোন রকমে রক্ষা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনাটি মর্তিঝর্ণা এলাকাতেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।