বাবা ছেলের স্বীকারোক্তি
জোরারগন্জে অস্ত্র উদ্ধার,নেপথ্যে নওশাদ মাহমুদ রানা!

বাংলাদেশ মেইল ::

মিরসরাইয়ের জোরারগন্জে  অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি রিভলবার, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি এয়ারগান, ২০১ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৭। এসময় জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম কাটাছরা গ্রামের মৃত শফি উল্ল্যার ছেলে নুর উল্লাহ (৪৫) ও তাঁর ছেলে মো. নাইমুল ইসলাম শুভকে (২১) আটক করা হলেও, অধরা রয়ে গেছে এই চক্রের মুলহোতা কথিত যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা৷

একই আস্তানা থেকে বাকলিয়ার আলোচিত  সন্ত্রাসী ইয়াকুবকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইয়াকুব দিনে দুপুরে অস্ত্রসহ নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার বড় মৌলবী বাড়ী কবরস্থান দখল করতে গিয়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিলেন। বাকলিয়া থানার পুলিশ এই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জোরারগন্জের একটি আস্তানার সন্ধান পান। মুলত সেখান থেকেই অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়৷

গত ১১ জুন বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার আব্দুল লতিফ হাটখোলা রোডে বড় মৌলভী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে বিনামূল্যে কবর দেওয়া হয় উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে এলাকার ভূমিদুস্য ইয়াকুব, ওসমান গং অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীমের পরিবারের উপর।

এদিকে, রোববার (৩১ অক্টোবর)  রাত ১১টায় উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের আবদুস ছত্বর ভূঁইয়া হাট থেকে র‌্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে  অস্ত্র এবং মাদকদ্রব্যসহ দুইজনকে আটক করে। আটক দুই ব্যক্তি  সম্পর্কে  বাবা-ছেলে । গ্রেফতার হবার পর তারা পুলিশকে জানায় অস্ত্রগুলোর উৎস সম্পর্কে। অস্ত্রভান্ডারের সাথে আলোচিত যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হবার পর তাকেও মামলার আসামী করা হয়।

জানা যায়, আটক নুর উল্লাহ মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক । র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার  জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে মিরসরাইয়ের আবদুস ছত্বর ভূঁইয়া হাটে নুর উল্লাহর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মদিনা ডেকোরেশন ও তার বাড়িতে ৪ ঘণ্টাব্যাপি অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি রিভলবার, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি এয়ারগান, ২০১ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। এ সময় নুর উল্লাহ ও তাঁর ছেলে মো. নাইমুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। র‌্যাব-৭ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়সহ অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কথা স্বীকার করেছে । আটক হওয়া দুইজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জোরারগঞ্জ থানায় তাদের সোপর্দ করা হলে দায়ের করা হয় মামলা ।

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর হোসেন মামুন  জানান, র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় আটক জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম কাটাছরা গ্রামের মৃত শফি উল্ল্যার ছেলে নুর উল্লাহ (৪৫) ও তাঁর ছেলে মো. নাইমুল ইসলাম শুভ (২১) নওশাদ মাহমুদ চৌধুরী রানা (৫৩) পিতা- মৃত শামসুল আলম চোং, চান্দগাও জালাল আহমেদ চৌধুরী বাড়ী , চট্টগ্রাম, মেজবাহ উদ্দিন, পিতা মৃত জাকির হোসেন, পশ্চিম দূর্গাপুর, জোরালগঞ্জ চারজনের নামে মামলা দায়ের করা করেছে।

মিরসরাইতে বিপুল পরিমান অস্ত্র গোলাবারুদ সহ পিতা-পুত্রের আটকের ঘটনায় র‌্যাবের দায়ের করা মামলায়  নওশাদ মাহমুদ চৌধুরী রানাকে আসামি করা হলেও সোমবার রাত পর্যন্ত  তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার নুর উল্লাহ র‌্যাবকে জানিয়েছে এলাকায় আধিপত্য রাখতে স্থানীয় মেজবাহ উদ্দিনের সহযোগীতায় চট্টগ্রামের কথিত যুবলীগ  নেতা নওশাদ মাহমুদ চৌধুরী  রানার কাছ থেকে এসব অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া নুর উল্লাহ ও নওশাদ মাহমুদ রানার সাথে  বাকলিয়ায় আব্দুল লতিফ হাটখোলা এলাকায়  কবরস্থান দখলের ঘটনার গডফাদার ইয়াকুবের সাথে সম্পর্ক  নিশ্চিত করেছে একাধিক সুত্র। সুত্রমতে বাকলিয়ার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎসও একই সুত্রে গাঁথা। পলাতক থাকা  ইয়াকুবকে মিরসরাইয়ের জোরারগন্জের একটি আস্তানা থেকে গেল ২৪ জুন গ্রেফতার করে পুলিশ। সুত্রমতে, কবরস্থান দখলের ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হলে ধারাবাহিক পুলিশি অভিযানের পর গা ঢাকা দিতে জোরারগন্জের একই ডেরায় লুকিয়ে থাকে ইয়াকুব। সেদিনের ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের যোগানদাতাও রানা।

এর আগে দিনেদুপুরে সাইফুল নামের এক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে সংবাদের শিরোনাম হন রানা। পরে পুলিশ তৎপর হলে ঐ ব্যবসায়ীকে চোখ বেঁধে রেখে গিয়েছিলেন নগরীর খুলশী এলাকায়।