চট্টগ্রামে দল পুনর্গঠনে পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি, এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ মেইল ::

সাংগঠনিক জেলা চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ,  মহানগরে আওয়ামী লীগের আগেই দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি। এ জন্য তারা প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু করেছিল। কিন্তু আগে শুরু করেও পিছিয়ে পড়েছে বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া । অন্যদিকে দল পুনর্গঠনে এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।

এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নানা কারণে নিজেদের কাউন্সিলসহ সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার। এরই মধ্যে দুই বছর কেটে গেছে মহামারি করোনায়। ওই সময় সাংগঠনিক সব কর্মযজ্ঞ বন্ধের কারনে দল পুনর্গঠনে সন্তোষজনক সাফল্য পায় নি বিএনপি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় চট্টগ্রামে  ফের শুরু হয় কর্মকাণ্ড। কিন্তু চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আনোয়ারা ও সাতকানিয়া উপজেলায় তিনটি কমিটি নিয়ে মাঠপর্যায়ে তুমোল সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি।

বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বিএনপির দশটি বিভাগীয় সাংগঠনিক এলাকার  মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সাংগঠনিক অবস্থায় রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। এ দুই বিভাগের অনেক জেলায় বিএনপির অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। এর মধ্যে অন্যতম বান্দরবান জেলা। ২০১৭ সালে ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার পরপরই ১৩ জন নেতা পদত্যাগ করেন, ৩ জন নেতা রাগে-ক্ষোভে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আর আনোয়ারা উপজেলায় ৬১ সদস্যের কমিটিতে শিল্পপতি জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত হেলাল বিতর্কে কমিটির ৪৩ জনই তাকে অপসারণের দাবিতে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা ছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউনিট পুনর্গঠন করার। কিন্তু করোনা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানে প্রশাসক ও শাসক দলের বাধার কারণে সাংগঠনিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে সম্প্রতি স্বাভাবিকভাবে নির্বিঘ্নেই তারা দলের কর্মসূচি পালন  করতে পারছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি একজন ভাইস চেয়ারম্যান  নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন,  ‘ ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান,রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারা, সাতকানিয়া কমিটি নিয়ে তৃণমূল  কর্মীরা হতাশ । এরপর আবার ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম  মহানগর কমিটি করতে না পারা বা অন্য সংগঠনগুলো পুনর্গঠন না করা তাঁদের সে হতাশাকে আরও বাড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দল তাঁদের সামনে কোনো সম্ভাবনা দেখাতে পারছে না। দল পুনর্গঠন  অপেক্ষাকৃত তরুন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার  মীর হেলালের  অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছয়টি উপজেলার দল পুনর্গঠন কার্যক্রম। ‘

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যেও এখন এসব কর্মকাণ্ডে হতাশার বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। গেল তিনবছর চট্টগ্রামে সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিল কার্যত নিষ্ফল। মামলার বোঝা কাঁধে নিয়ে দলীয় প্রতীকে পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার মধ্য দিয়ে বছর পার করছে দলটি।

দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, বছরের পর বছর ‘ব্যর্থ’ আন্দোলনের মাশুল এখনো গুনতে হচ্ছে তাঁদের। আইনজীবি ফোরামের এই নেতার অনৈতিক সুপারিশ আর হস্তক্ষেপের সাংগঠনিক দক্ষতার সম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি।

বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী মামলার আসামি, অনেকে এখনো কারাগারে, অনেকে আত্মগোপনে, জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। আনোয়ারা উপজেলার সদ্য ঘোষিত কমিটিতে আলোচিত  বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা, সমগ্র চট্টগ্রামে  বিএনপিকে ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছে।সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌরসভার আহবায়ক কমিটিতে মৃত ব্যক্তিকে সদস্য করা, জামাতের লোকদের পুনর্বাসন, আওয়ামী লীগ কর্মিকে পদ দেয়া, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের নেতৃত্বে আনা -এমন সব স্পর্শকাতর অভিযোগে স্থানীয়  পর্যায়েও বিএনপিকে এখন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগের বছরটিতে রাজপথে  আন্দোলনে যাবার সক্ষমতা হারিয়েছে  বিএনপি।

অন্যদিকে, দলে নেতাদের মধ্যে বড় বিভাজন থাকলেও আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরে ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ করেছে। মহানগরে স্বেচ্চাসেবক লীগের কমিটি গঠন চুড়ান্ত করেছে। যুবলীগের সম্মেলন করার প্রস্তুতিও শেষ। ৩০ মে অনুষ্ঠিত হবে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন। নগরের বাইরে পটিয়া উপজেলা ছাড়া দৃশ্যত দল গঠন প্রক্রিয়া কোনখানে বাধাগ্রস্ত হয়নি। দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির একছত্র অধিপত্যের কারনে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা, দক্ষিণ জেলায় বিতর্ক এড়িয়ে দল গঠনে এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।

উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। সীতাকুন্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এ এস এ আল মামুনকে সভাপতি এবং হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

আর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছে ২০১০ সালে। এতে আ.ম.ম. টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি এবং অধ্যাপক পার্থ সারথি চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। একযুগ পর হলেও আওয়ামী লীগ তিনটি শাখায় দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আগামী জুনে মহানগর আ.লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নেতারা। আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদন সাপেক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন।

বিএনপি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম মনে করেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী দল পুনর্গঠন কার্যক্রম চট্টগ্রামে সফলতার সাথে শেষের দিকে। বিচ্ছিন্ন ২/৪টি অসন্তোষের ঘটনা ছাড়া বিভাগের অধিকাংশ ইউনিটে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক  সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কার্যক্রমে সন্তোষজনক অগ্রগতি আছে। আওয়ামী লীগ  বড় সংগঠন এই কারনে সময় লাগছে বেশি ৷ ‘