বিএনপির ঘৃণ্য গ্রুপিংয়ের শিকার আলমগীর
কারাগারে মারা যাওয়া যুবদল নেতার জানাজা,প্রতিপক্ষের ব্যান্ড পার্টি

বাংলাদেশ মেইল ::

কারাগারে মৃত্যুবরন করা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য আলমগীরের জানাজায় অংশ নেন নি আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন ও তার অনুসারীরা। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারনে জানাজার পাশে বাদ্য-বাজনা নিয়ে ব্যান্ড পার্টির আয়োজন করে একটি পক্ষ।

আনোয়ারা উপজেলার চাতরি চৌমুহনীতে স্থানীয়দের পারিবারিক দ্বন্দে মারমারির মামলায় জামিন নামঞ্জুর হলে জেলে যেতে হয় দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য আলমগীরকে । নিজের দলের নেতাই তাকে মামলার আসামী করে জেলে পাঠিয়েছিলেন। আলমগীরকে কৌশলে মামলার আসামী করার পুরস্কার হিসেবে সেই নেতাকে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটির  যুগ্ম আহবায়ক পদ দেয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার  কারাগারে নিহত আলমগীরের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাযার নামাজের সময়ই প্রতিপক্ষের লোকজন বাদ্য-বাজনা নিয়ে ব্যান্ড পার্টির আয়োজন করে। দলের কর্মির জানাযার নামাজের সময়ে এমন গর্হিত কাজের সমালোচনা করতে দেখা গেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।

অভিযোগের তীর যার দিকে সেই জাকির হোসেন স্থানীয় রাজনীতিতে সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিনের একনিষ্ঠ অনুসারী। জানাজার নাসাজের সময় বাদ্য-বাজনার আয়োজনের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির একটি অংশকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, কারাগারে মৃত্যুবরন করা যুবদল নেতা আলমগীরের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের চৌমুহনীতে । যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে কমিটিতে পদ পাওয়া জাকির হোসেনের বাড়িও একই গ্রামে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিণ জেলা   যুবদলের সদস্য আনোয়ারার রাজনীতিতে লায়ন হেলালের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাথে জড়িত ছিলেন  । যুবদল নেতা আলমগীরকে হেলালের (বর্তমানে বিএনপির সদস্য সচিব)  সাথে রাজনীতি করার প্রস্তাব দেয়া হলে সে রাজি হয় নি। পরে হেলাল উদ্দিনের অনুসারী জাকিরকে দিয়ে পারিবারিক মারামারির মামলায় আলমগীরকে আসামী করে আলমগীরকে পাঠানো হয় জেলে। মামলার বাদি জাকিরের আপন ভাতিজা জসিম উদ্দিন। মামলায়  জামিন বাতিল হলে কারাগারে থাকা অবস্থায় আলমগীরের মৃত্যু হয়েছে। আলমগীরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু রাজনৈতিক মামলা থাকলেও কারাগারে ছিলেন এই মারামারির মামলায়।

আনোয়ারা যুবদলের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে আলমগীরের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের এক সাবেক সহ সভাপতি জানান, স্থানীয় বিএনপির আভ্যন্তরীণ দ্বন্দের খেসারত হিসেবে জেলে যেতে হয়েছে যুবদল নেতা আলমগীরকে। মারামারির  ঘটনার ১৫ দিন পরে মামলা দেয়া হয়েছিল। মারামারির ঘটনায় বিএনপি নেতা জাকির মাথায় আঘাত পায়। এই ঘটনায় আলমগীরকে জড়িয়ে দিয়ে মামলা করানোর নেপথ্যে ছিলেন লায়ন হেলাল ও তার অনুসারী জাকির। ঘটনার দুই সপ্তাহ পরে মামলা দায়েরের তদবিরে সরকারি দলের একজনকে ব্যবহার করেছেন হেলাল৷

কারাগারে যুবদল নেতা আলমগীরের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। ২০ মে দলের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ‘ কারাগারে মৃত্যু হওয়া আলমগীরের মৃত্যুর কারন তদন্তের দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি নিরব ও সাধারণ সম্পাদক টুকু। দলের বিভিন্ন শাখাও যুবদল নেতার মৃত্যুতে বিবৃতি দিয়ে দায় সেরেছে। গতকাল (২০ মে) তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির জরুরি সভায়। কিন্তু যার কারনে আলমগীরকে কারাগারে যেতে হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবার দাবি স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

যুবদল নেতার জানাজায় অংশ নেয়নি উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন ও তার কোন অনুসারী। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকলেও দলের কর্মির মৃত্যু পরবর্তী   জানাজায় অংশ না নেওয়ায় সমালোচনার পাত্র হয়েছেন লায়ন হেলাল। জানাজায় অংশ না নিয়ে একই স্থানে (পাশ্ববর্তী জায়গায়)  বাদ্য-বাজনা, ব্যান্ড পার্টির আয়োজন করাকে সামাজিক শিষ্টাচারেন লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী।

আনোয়ারা বিএনপির আহবায়ক মোশারফ হোসেন বলেন,  ‘ আলমগীর যুবদলের নিবেদিত প্রাণ কর্মি ছিলেন। নিজের দলের লোক মামলা করে তাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। জানাজার সময় ব্যান্ড  পার্টির আয়োজন করা হয়েছে – এর চেয়ে লজ্জাজনক নজির আর হতে পারে না। এসবের ইন্দনদাতা হেলাল বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করেছেন আমার কর্মীদের কস্ট দেবার জন্য।   ‘

এবিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি  সাইফুল ইসলাম নিরব  জানান, মামলার বাদি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এমন অভিযোগের বিষয়ে  অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। যুবদল নেতার মৃত্যুর জানাজার সময় এমন ঘৃন্য কাজ যারা করেছে তারা জাতীয়তাবাদী দলের লোক হতেই পারে না। স্থানীয়  বিএনপির কোন নেতা এসবে জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবার দাবি জানাবো। ‘

তিনি বলেন,  অবৈধ সরকারের কারাগারে মৃত্যুবরন করেছেন যুবদলের নেতা আলমগীর। কোন মামলায় তিনি কারাগারে ছিলেন আমার জানা নেই। মামলার বাদি দলের লোক সেটা তো অবাক করা বিষয়।  তবে আপনার অভিযোগের সত্যতা পেলে কোন ছাড় দেয়া হবে না। ‘

উল্লেখ,  গত ১৪ মে হেলালকে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব করা হয়েছে। এরপর থেকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে জরুরি সভা করেছে উপজেলা বিএনপির  একই আহবায়ক কমিটির ৪৩ জন সদস্য। হেলালের বিরুদ্ধে শিল্পপতি ও বিএনপি নেতা  ‘জামাল উদ্দিন ‘ অপহরণ ও হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন তারা।