বাঁশখালী সীমান্তে 'আনন্দ মিছিল '
নেতার মান বাঁচাতে সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির অভিনব কৌশল

সাতকানিয়া উপজেলা ও সাতকানিয়া পৌরসভা বিএনপির কমিটি ঘোষণার দশদিন পর অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ‘আনন্দ মিছিল’ নামে শো ডাউন করেছে কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাকর্মীরা।

সাতকানিয়া সদর ও পৌর এলাকা এড়িয়ে বাঁশখালী সীমান্তে এই আনন্দ মিছিল করেন বিএনপির একটি অংশ।

কমিটি ঘোষনার পর থেকে  মাদক ব্যবসায়ী, মৃত ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা,আওয়ামী লীগ কর্মিদের পদায়ন, জাল পাসপোর্ট তৈরির কুশীলবকে সদস্য সচিব করাসহ নানা অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়ে এই কমিটি। প্রতিদিনই বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ঝাড়ু মিছিল প্রতিবাদ মিছিলে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে সাতকানিয়া এলাকা। রীতি অনুযায়ী কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করতে কার্যত ব্যর্থ হয় কমিটিতে স্থান পাওয়া বিএনপির অংশটি।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়  আনন্দ মিছিলটি কখন, কোন সময়ে ও কোন স্থানে করা হয়েছে তার কিছু উল্লেখ নাই। এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি প্রকাশ করতে দেখা গেছে দলের কর্মীদের।

আনন্দ মিছিলে বহিরাগতদের নিয়ে যাওয়ার ছবি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। উত্তর সাতকানিয়া বিএনপি নেতা আবুল হোসেনের দেওয়া এক ফেইসবুক পোস্টে দেখা গেছে, বাঁশখালীর বাসিন্দা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহিদুল আলম শহিদকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়  চট্টগ্রাম শহর থেকে ভাড়াটিয়া কর্মী নিয়ে ছাত্রদলের মিছিল অর্গানাইজ করতে সিদ্ধহস্ত বাঁশখালীর শহিদুল আলম শহিদকে ব্যবহার করা হয়েছে মিছিল প্রস্তুতিতে।

তথ্যমতে বিএনপির এই মিছিলে বিভিন্ন এলাকা থেকে  ভাড়ায় কর্মী নেওয়া হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত মিছিলে হাটহাজারী, বোয়ালখালী,আনোয়ারা, বায়েজিদ, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ে করে আনন্দ মিছিল করার কৌশল নিয়েও শেষ পর্যন্ত সাতকানিয়া সদরের আশপাশে যেতেই পারেনি মিছিলকারীরা।

মিছিলে হাটহাজারী এলাকা থেকে অংশ নেয়া এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাটহাজারী ও বায়েজিদ এলাকা থেকে ৫০ জন লোক সংগ্রহ নিয়ে যাবার নির্দেশ আসে এক বিএনপি নেতার কাছ থেকে। জনপ্রতি ১৫০০ টাকা এবং গাড়িও দেয়া হয়েছে তাদের। ‘

দলের মিছিলে লোকভাড়া নিয়ে যাবার কারন হিসেবে তিনি জানান,  সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে পদবঞ্চিতরা লাগাতার বিক্ষোভ, ঝাড়ু মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালনের কারনে কেন্দ্রে তোপের মুখে পড়ে কমিটি। সাতকানিয়ায় কোন মিছিল করতে না পারার কারনে বিব্রত ছিলেন কমিটির বিভিন্ন পদে  সুপারিশ করা সেই নেতা। ‘

স্থানীয়রা জানান, সাতকানিয়ায় পদবঞ্চিত মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের অনুসারী জনসম্পৃক্তা বেশি।  সদ্য ঘোষিত কমিটির আহবায়ক জামাল হোসেনের সে ধরণের অবস্থান নেই মাঠ পর্যায়ে। ফলে এর আগেও আনন্দ মিছিল করার ঘোষণা দিলেও মুজিব চেয়ারম্যানের অনুসারীদের শক্ত অব্স্থানের কারণে মিছিল করা থেকে বিরত থাকে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য জসিম আবদুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, পৌরসভায় আনন্দ মিছিল করার জন্য তারা সকাল ৭ টা থেকে অবস্থান নেয়, কিন্তু লোকজন না থাকার কারণে তারা পিছু সরে যায়। এরপর জামাল হোসেন তাঁর বাড়ি মাদার্শায় লোকজন নিয়ে গিয়ে মিছিলটি করেছে। মিছিলে আনোয়ারার বিএনপি নেতা লায়ন হেলাল উদ্দীনের অনুসারী এসেছে, বাঁশখালীর শহিদুল আলম শহিদসহ শহর থেকে ভাড়াটে লোকজন এনে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্তহীন জামাল হোসেন তাঁর বাড়ির সড়কে আনন্দ মিছিল করেছে। সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির যে শক্তিশালী অবস্থান তার মতো একজন অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়াতে বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে। ‘

দক্ষিণ জেলা যুবদলের, স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিছিল আয়োজনে আনোয়ারা উপজেলায় সদস্য সচিব পদ পাওয়া বিতর্কিত ব্যক্তি হেলাল উদ্দিনের দায়িত্ব ছিলো বেশি। তিনি আনোয়ারা থেকে বেশকিছু লোকজন যোগান দেন। সদস্য সচিব পদ পেয়েও  আনোয়ারায় দলের ভেতরে একঘরে হয়ে যাবার কারনে কমিটি ঠিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ তার সামনে। তার জন্য সুপারিশকারী হিসেবে চিহ্নিত ‘ম’ আদ্যাক্ষরের একজন নেতা বেশ চাপের মুখে পড়েছেন। কারন হেলালের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার কারনে বেশ চাপের মুখে পড়েছেন ঐ নেতা।

আনোয়ারা উপজেলার আহবায়কের নেতৃত্ব সব যুগ্ম আহবায়ক  (দুইজন ছাড়া) ঢাকায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাথে দেখা করে হেলালকে কমিটি থেকে অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার তাদের আলটিমেটাম জমা দিয়েছেন।

এদিকে, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পাঠানো সংবাদে জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলা-পৌরসভা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আনন্দ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত আহবায়ক কমিটির আহবায়ক জামাল হোসেন, সদস্য সচিব গোলাম রসূল মোস্তাক, যুগ্ম আহবায়ক আহমদুল হক সিকদার, আলহাজ্ব এম এ রহিম, মোহাম্মদ লোকমান মেম্বার, আব্দুল মোমেন চৌধুরী, আবদুর রহিম মেম্বার, জিয়াবুল হোসেন চৌধুরী, হাজী ছামাদ, নবনির্বাচিত সদস্য আবুল কালাম, আবদুল আলীম, মোহাম্মদ মোর্শেদুল আলম, এম সোহেল রানা সওদাগর, মোহাম্মদ ইসমাইল, শাহ আলম, মোহাম্মদ রফিক, মো: ইউনুছ সওদাগর মেম্বার, সাতকানিয়া পৌরসভা বিএনপির নবনির্বাচিত আহবায়ক শওকত আলী চৌধুরী, সদস্য সচিব মোহাম্মদ আবদুর রহিম, সি: যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ রফিক, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ ফেরদৌস, মাঈনুদ্দীন মোহাম্মদ জাহেদ, মোতাহার হোসেন মামুন, জয়নাল আবেদীন, বিএনপি নেতা এহসান মোল্লা, হারুনুর রশীদ, এস এম নূরুল হক, রমজান আলী, যুবদল নেতা নেজাম উদ্দিন, এস এম জাহেদ, ইকবাল হোসেন রুবেল, নাজমুল হাসান সম্রাট, নাজিম উদ্দীন, মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ কায়সার, আবুল কাসেম আযাদ, মোহাম্মদ শাজাহান, উত্তর সাতকানিয়া যুবদল নেতা মোহাম্মদ কামাল হোসেন, আমান তানজিব উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ শাকিল, সায়মুন খান, পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দল এহসানুল করিম, তারেক মাহমুদ রিদুয়ান, ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান, আশিক, জামশেদ, আনিস, মহিম, ফাহিম, তোহা, ইমন, রাফি, উত্তর সাতকানিয়া কৃষকদল নেতা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মিসকাতুন্নাবী মিসকাত প্রমুখ।